হেফাজতে ইসলামের হরতালের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টানা তৃতীয় দিনের মতো তাণ্ডব চালিয়েছে মাদ্রাসার ছাত্ররা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে হেফাজতকর্মীরা। পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে অন্তত দুজন হাসপাতালে মারা গেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দুপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কিসের আঘাত তা ময়নাতদন্ত না করলে বলা যাবে না। নিহতদের একজন হলেন সরাইল উপজেলার সৈয়দটুলা গ্রামের সফী আলীর ছেলে আলামিন (১৯)। অন্যজনের নাম জানা যায়নি, তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। এই নিয়ে সহিংসতায় এই জেলায় অন্তত ৭ জনের প্রাণহানি ঘটল। তাদের মধ্যে ৫ জন শনিবার পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে মারা যান। খবর বিডিনিউজের।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর ঘিরে শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘাত ও প্রাণহানির পর হেফাজতে ইসলাম গতকাল সারা দেশে হরতাল ডাকে। সেই হরতালে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা সদরের পশ্চিম মেড্ডা ও সরাইলের খাটিহাতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হরতাল সমর্থনকারীদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হরতাল সমর্থকরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, পৌর মিলনায়তন, জেলা গণগ্রন্থাগার, আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, আনন্দময়ী কালীবাড়ি, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে আয়োজিত উন্নয়ন মেলার অন্তত অর্ধশত স্টল, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয় ও বাড়ি, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব ভবনেও হামলা চালায় হেফাজতকর্মীরা। হরতালকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরাসারে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের কার্যালয় এবং জেলা পুলিশ লাইনসে হামলার চেষ্টা চালায়।
তাদের হামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি ও আমাদের নতুন সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আবুল হাসনাত রাফি আহত হন। শহরের ভিতর বিভিন্ন গলিতে রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দেওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগুন নেভাতে যেতে বেগ পেতে হয়।
তবে শহরের পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা কোনো কথা বলেননি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ধরেননি।