এবারের প্রিমিয়ার লিগে টানা দুই ম্যাচে জিতে দারুণ ছন্দে ছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন। অপরদিকে মোহামেডান ব্লুজ টানা দুই ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়ে ছিল চাপে। তৃতীয় ম্যাচে এসেই সেই উড়তে থাকা ব্রাদার্সের সামনে পড়ল মোহামেডান ব্লুজ। কিন্তু শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে পেয়ে যেন জ্বলে উঠল মোহামেডান ব্লুজ। ব্রাদার্স ইউনিয়নকে যেন একেবারে মাটিতে নামিয়ে আনল। গত আসরের রানার্স আপ দলটিকে একে একে ৫ গোল দিল মোহামেডান ব্লুজ। এবারের লিগের শুরুতেই নবাগত কিষোয়ান স্পোর্টিং ক্লাব ৫–১ গোলে হারিয়েছিল চ্যাম্পিয়ন মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘকে। গতকাল ব্রাদার্সকে ঠিক ৫–১ গোলে হারিয়েছে মোহামেডান ব্লুজ। শুধু তাই নয় লিগের গত আসরে এই মোহামেডান ব্লুজকে ৫–১ গোলে হারিয়েছিল ব্রাদার্স। গতকাল যেন সেই হারের প্রতিশোধ নিল সাদা–কালো জার্সিধারীরা। একজন সৌরভ দেওয়ান যেন তছনছ করে দিল ব্রাদার্স ইউনিয়নকে। লিগের প্রথম হ্যাটট্রিক তুলে নেওয়ার পাশাপাশি সৌরভ একাই করেছেন চার গোল। ম্যাচের শুরু থেকেই বুঝা যাচ্ছিল সৌরভ দেওয়ানকে আটকানো কঠিন হবে। তার প্রমান দিতে বেশি সময় নেননি এই তরুণ। খেলার ৭ মিনিটেই অসাধারন এক গোল করে মোহামেডান ব্লুজকে এগিয়ে দেন সৌরভ। নিজেদের অর্ধ থেকে সজলের বাড়ানো বল ধরে দারুন ক্ষীপ্রতায় এগিয়ে গিয়ে ব্রাদার্স কিপারের পাশ দিয়ে বল পাঠান জালে। অবশ্য পরের মিনিটে সমতা ফেরাতে পারতো ব্রাদার্স। কিন্তু সংঘবদ্ধ আক্রমন থেকে ডি বঙে বল পেয়েছিলেন আশিক। তার শট ফেরান সোহেল। ফিরতি বলে রুম্মানের শট চলে যায় ক্রসবার উঁচিয়ে। ১৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সেই সৌরভ। এবারের গোলটিও সেই প্রথম গোলের মতই। এবারো মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে সেই কোনাকোনি শট। আর সেটা ঠিকানা খুজে নেয় জালে। এরপরের চার মিনিট রীতিমত ঝড় তোলে ব্রাদার্স। ১৮ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে আশরাফুলের শট চলে যায় সাইডবার ঘেষে। ২০ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে সেই আশরাফুলের শট ক্রসবারে লেগে ফিরে এলে আরো একবার হতাশ হতে হয় ব্রাদার্সকে। তবে ২১ মিনিটে গোল পায় ব্রাদার্স। ডান প্রান্ত থেকে বাদলের কর্নার। ডি বক্সে থাকা মিনহাজের হেড জড়ায় জালে। খেলায় ব্যবধান কমে দাড়ায় ২–১। কিন্তু কে জানতো সে গোলটি কপাল পুড়বে ব্রাদার্সের। কারন এরপর আরো তিনটি গোল হজম করেছে তারা। ৩০ মিনিটে ব্যবধান ৩–১ হতে পারতো। ডান প্রান্তে প্রায় ৩৫ গজ দুর থেকে আচমকা শট নিয়েছিলেন নুর আলম। কিন্তু সে শট গোলে ঢুকার মুহুর্তে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ব্রাদার্স গোল রক্ষক। ৩৭ মিনিটে আবার গোল সৌরভের। এবার মাঝ বৃত্তের সামনে থেকে ফারুকের বাড়ানো বল ধরে সেই একই গতিতে এগিয়ে যান সৌরভ। ডি বঙের ভেতর থেকে আবারো কোনাকোনি শট বল জড়ান জালে। পুরন করেন নিজের হ্যাটট্রিক। গতকালই প্রথম এই লিগে খেলতে নেমে লিগের প্রথম হ্যাটট্রিক তুলে নিলেন সৌরভ দেওয়ান। আর তাতেই শেষ হয়ে যায় ব্রাদার্সের জয়ের স্বপ্ন।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই চেহারায় মোহামেডান ব্লুজ। ১৪ মিনিটে সায়েমের কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বলে ফাহিমের নেওয়া শট সাইডবার ঘেষে বাইরে চলে না গেলে ব্যবধান আরো বাড়তো। তবে ১৯ মিনিটে ব্যবধান ৪–১ করে মোহামেডান ব্লুজ। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সায়েম। কিন্তু ডি বঙে তাকে ফাউল করেন ব্রাদার্সের গোলরক্ষক। পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারী। আর সে পেনাল্টি থেকে নাছির গোল করে ব্যবধান ৪–১ করেন। ৩৮ মিনিটে আগের বছরের প্রতিশোধ নিয়ে নেয় মোহামেডান ব্লুজ। এবার আবারো সেই সৌরভ। নিজেদের অর্ধ থেকে হেলালের বাড়ানো বল ধরে আবার সেই কোনাকোনি শটে সৌরভের গোল। মোহামেডান ব্লুজের হলো ৫ গোল আর সৌরভের ৪ গোল। ম্যাচের বাকি সময়েও দাপট ছিল মোহামেডান ব্লুজের। বলা যায় ব্রাদার্স ইউনিয়ন যেন ম্যাচটি শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষায় ছিলেন। কখন যে মুক্তি মেলে। শেষ পর্যন্ত ৫–১ গোলের লজ্জার পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ব্রাদার্স ইউনিয়নকে। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারের জন্য সৌরভের কোন বিকল্প ছিল না। তার হাতে পুরষ্কার তুলে দেন সিজেকেএস কাউন্সিলর সৈয়দ নুর নবী লিটন। আজকের খেলা : মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র বনাম মাদারবাড়ি উদয়ন সংঘ। (বিকাল সোয়া তিনটা)।