শেষ হলো টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ভারত এবারের শিরোপা জিতে নিয়েছে। তবে লম্বা সময় ধরে চলা এই টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেছেন কিছু ক্রিকেটার। যাদের মধ্যে ব্যাট হাতে দারুন নৈপূর্ন দেখিয়েছেন আফগানিস্তানের ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ। আর বল হাতে আফগান ফজল হক ফারুকি এবং ভারতীয় পেসার আর্শদীপ সিং। ফজল হক ফারুকি ৮ ইনিংসে নিয়েছেন ১৭ উইকেট। তার সাথে একই কাতারে রয়েছেন ভারতের আর্শদিপ সিং। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭ রানে ৪ উইকেট নেন ফারুকি। আফগানদের ৮৪ রানের জয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেন তিনি। পরে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ৩ উইকেট নিলে তিন ম্যাচে ১২ শিকার হয়ে যায় তার। শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতে তাকে পুরো ৪ ওভার করাননি রাশিদ খান। সব মিলিয়ে ওই পাঁচ ম্যাচে তিনি নেন আরও ৫ উইকেট। ২০২১ বিশ্বকাপে নিজের প্রথম আসরে ১৬ উইকেট নিয়ে এক টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড গড়েছিলেন হাসারাঙ্গা। এবার সেটা ভাঙলেন ফারুকি। এদিকে পুরো আসরজুড়েই ধারাবাহিক বোলিং করেন ভারতের আর্শদিপ। ৮ ম্যাচে তিনিও নিয়েছেন ১৭ উইকেট। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ৯ রানে ৪ উইকেট আর্শদিপের সেরা। ফাইনালে ১৯তম ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রাখার আগে এইডেন মার্করাম ও ডি ককের উইকেটও নেন তিনি। ডি কককে ফিরিয়েই ফারুকির উইকেট সংখ্যা স্পর্শ করেন তরুণ বাঁহাতি পেসার। জাসপ্রিত বুমরাহ ৮ ইনিংসে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। গ্রুপ পর্বে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ছাড়া বাকি সাত ম্যাচেই উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ। পাওয়ার প্লের শুরুতে আটকে রাখার পর শেষ দিকেও আঁটসাঁট বোলিংয়ের অনন্য নজির এবার দেখান বুমরাহ। প্রতিটি উইকেটের জন্য তার খরচ মাত্র ৮.২৬ রান। ফাইনালসহ আসরজুড়ে নজরকাড়া বোলিংয়ে টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কারও জেতেন বুমরাহ। দক্ষিণ আফ্রিকার আনরিক নরকিয়া ৯ ইনিংসে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। আইপিএলে বেধড়ক পিটুনি খাওয়ার পর বিশ্বকাপে পুরোপুরি ভিন্ন রূপ দেখা যায় আনরিক নরকিয়ার। মিতব্যয়ী বোলিংয়ে নিয়মিতই প্রতিপক্ষের কঠিন পরীক্ষা নেন দক্ষিণ আফ্রিকার গতিতারকা। সব মিলিয়ে ওভারপ্রতি মাত্র ৫.৭৪ রান খরচ করে ৯ ম্যাচে ১৫ উইকেট নেন নরকিয়া। এই যাত্রায় টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা ১৬ ম্যাচে উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও গড়েন তিনি। রাশিদ খান ও রিশাদ হোসেন নিয়েছেন ১৪ টি করে উইকেট। আফগানিস্তানের স্বপ্নযাত্রায় সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন রশিদ খান। ওভার প্রতি মাত্র ৬.১৭ রান খরচ করে ৮ ম্যাচে তিনি নেন ১৪ উইকেট। নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪টি করে উইকেট নেন তারকা লেগ স্পিনার। এছাড়া ৭ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে রশিদের ঠিক নিচে রিশাদ হোসেন। প্রথমবার টি–টোয়েন্টির বিশ্ব আসরে খেলতে গিয়ে বাংলাদেশের হয়ে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড গড়েন তরুণ লেগ স্পিনার। ব্যাটিংয়ে সেরা গুরবাজ। তিনি করেছেন ৮ ইনিংসে ২৮১ রান। আফগানিস্তানের আগে ব্যাট করা পাঁচ ম্যাচের চারটিতে চল্লিশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যান। উগান্ডার বিপক্ষে ৭৬ রান করে যাত্রা শুরুর পর নিউজিল্যান্ড ম্যাচে তিনি খেলেন ৮০ রানের ইনিংস। পরে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ৬০ রান। সেমি–ফাইনালে ওঠার জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪৩ রান করেন গুরবাজ। ৮ ইনিংসে ২৫৭ রান করে দ্বিতীয় স্থানে রোহিত শার্মা । ফাইনালে ৩৪ রান করলে তিনি টপকে যেতেন গুরবাজকে। কিন্তু ৯ রানেই থেমে যাওয়ায় দুই নম্বরে থেকে আসর শেষ করতে হয় ভারত অধিনায়ককে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৪১ বলে ৯২ রানসহ তিনটি পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলেন রোহিত। ৭ ইনিংসে ২৫৫ রান করেন ট্রাভিস হেড।
আইপিএলের দুর্দান্ত ছন্দ বিশ্বকাপেও টেনে আনেন ট্রাভিস হেড। ৭ ম্যাচে ১৫৮.৩৮ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেন ২৫৫ রান। সুপার এইটে টিকে থাকার লড়াইয়ে ভারতের বিপক্ষে হেড খেলেন ৪৩ বলে ৭৬ রানের ইনিংস। কুইন্টন ডি কক করেন ৯ ইনিংসে ২৪৩ রান। ফাইনালে একপ্রান্ত আগলে রেখে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন ডি কক। গুরবাজকে টপকে যাওয়ার সুযোগ ছিল তার সামনেও। শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে ৭৮ রান করতে পারলে শীর্ষে উঠে যেতেন ডি কক। ৮ ইনিংসে ২৩১ রান ইব্রাহিম জাদরানের। গুরবাজের সঙ্গে আফগানিস্তানের ব্যাটিং সামলানোর দায়িত্ব বেশ ভালোভাবেই পালন করেন ইব্রাহিম জাদরান। বিশ্বকাপের প্রথম জুটি হিসেবে এক আসরে তারা দুজন গড়েন তিনটি শতরানের জুটি। দলকে সেমি–ফাইনালে নেওয়ার পথে ৮ ইনিংসে দুই ফিফটিতে জাদরানের সংগ্রহ ২৩১ রান। উগান্ডার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে করা ৭০ রান তার সেরা। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান।