মার্ক চাগাল বলেছেন, ‘কাজ করা মানে অর্থ উপার্জন নয় ; আপনি জীবনকে ন্যায় সঙ্গত করার জন্য কাজ করেন’। কিন্তু আমরা এই ন্যায় সঙ্গত কাজটা ক‘জন করে থাকি? আজকের প্রসঙ্গ যেহেতু ব্যাটারি চালিত রিকশা, তাই প্রথমে চালকদের ন্যায়–অন্যায়ের কথাই বলি। একে তো হাই স্পিডে উড়িয়ে নেবে গাড়ি তার উপর সঠিক পথে না চলে প্রায় সময় উল্টোদিকে চলে। বেপরোয়া এই গাড়ি রাস্তায় ব্যারিকেট থাকলে একটুও ঘুরে আসতে চায় না। ভুল পথে দ্রুত আসার জন্য চলে। পরিণতিতে যাত্রী বা পথচারীকে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বিভিন্ন সময়ে এই ব্যাটারী চালিত রিকশা বন্ধে সরকার ঘোষণা দিলেও এটি কার্যকর করতে পারেনি। বরং চালকদের আন্দোলনের মুখে আবার তা চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে যত্রতত্র এই রিকশার এত প্রাদুর্ভাগ চলছে যেখানে সাধারণ জনগণের হাঁটার রাস্তা পর্যন্ত ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন কাঠামোগত কারণেই এই সব রিকশা সড়কের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ২০ বছর আগে যখন এইসব বাহন চালু হয় তখন সরকার নির্দিষ্ট পলিসি মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে এ পরিস্থিতি হতো না।
বিশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও শুধু মালিক বা চালক নয় বরং যাত্রীরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এই বাহনের উপর। সময় স্বল্পতার জন্য এই বাহন খুবই উপযোগী। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে চালকরা যথেচ্ছভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। পায়ের রিকশার যেহেতু ভাড়া তুলনামূলক বেশি এবং কালক্ষেপণ হয়, তাই যাত্রীরা ব্যাটারি রিকশায় বেশি নির্ভর হয়ে পড়েছেন। গ্রাম–গঞ্জ, শহরের এমন কোনো অলিগলি নেই যেখানে ব্যাটারি চালিত রিকশা নেই। এমন কিছু রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বা হেঁটে ঢোকা যায় না এই গাড়ির উপদ্রবের কারণে। মনে হয় গায়ের জোরে চালিয়ে নেবে। ঠিক তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। পায়ে চালিত রিকশার দুর্ঘটনার সংখ্যা যেমন কম তেমনি নিরাপদ। এই কথা সত্য যে ব্যাটারি চালিত রিকশা শ্রমিকদের পরিশ্রমের ফসল। পরিশ্রম হলো সফলতার মূল মন্ত্র। তবে নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য স্থির না করলে পরিশ্রম বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কোন কিছুকে পূর্ণতা দিতে হলে পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে যেকোনো কাজে কর্মীদের পরিশ্রম ও উদ্দীপনাই আসল। তবে ভুল পথে পরিচালনায় পরিশ্রমের ফল ব্যর্থ হয়।
যদিও মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, ‘নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো অন্যের সেবায় নিজেকে হারিয়ে ফেলা’। বর্তমানে ব্যাটারি চালিত রিকশার চালকগণ সেবা করতে গিয়ে এমনভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন যেখানে যাত্রীদের প্রাণ সংকটাপন্ন অবস্থা। পরিশেষে বলি মানুষের সেবায় মানুষ এগিয়ে আসবে এটাই মানবতার ধর্ম। সেই লক্ষ্যে রিকশা চালকদের পরিবারগুলোকে আহারের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এখন ওদের খুঁটি এতই শক্ত হয়েছে যতই বলা হয় আস্তে চালান ততই ওদের রেসের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। দিনের পর দিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে তারা সুযোগ নিচ্ছে এবং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিছুমাস আগেও যখন আইনশৃঙ্খলার ঘাটতি ছিল, ঐ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির উচ্ছৃঙ্খল যুবক ব্যাটারি রিকসার চালকদের সাথে আঁতাত করে ভুল পথে যাত্রী নামিয়ে দিত। এবং ছিনতাই করে যাত্রীদের সব লুটে নিত। যদিও এসবই প্রমান সাপেক্ষ। অচিরেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। নইলে সব ধরনের দুর্ঘটনার সংখ্যা একক, দশক, শতক ছাড়িয়ে হাজারে উঠবে।