ব্যাংক না, বৈদেশিক ঋণে জোর দিন

সরকারকে এফবিসিসিআই মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় করমুক্ত সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা করার সুপারিশ

| রবিবার , ৯ জুন, ২০২৪ at ৮:৩০ পূর্বাহ্ণ

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আড়াই লাখ কোটি টাকা ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে, তাতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহে বাধা সৃষ্টির আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তারা বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণে জোর দেওয়ার অনুরোধ করেছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমলে তার প্রতিক্রিয়ায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে করছে তারা। এই প্রভাব এড়াতে ভালো ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসার পরামর্শ দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুল আলম। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে শনিবার ঢাকার মতিঝিলে এফবিসিসিআইয়ে বোর্ডরুমে সংবাদ সম্মেলন করে ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি। খবর বিডিনিউজের।

প্রস্তাবিত বাজেটে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি মেটাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এই ঋণের ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের সম্ভাব্য ক্ষতি তুলে ধরে এফবিসিসিআই সভাপতি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘বাজেট ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে যথাসম্ভব সুলভ সুদে ও সতর্কতার সঙ্গে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের জন্য নজর দেয়া যেতে পারে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে সব দেশের সরকারই ঋণ নিয়ে থাকে। এ জন্য যে ব্যবসায়ীরা ঋণ পাবে না, বিষয়টি সে রকম নয়। তবে সরকার অতিরিক্ত ঋণ নিলে ব্যবসায়ীদের ঋণ পেতে কষ্ট হবে।’

ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য পুঁজিবাজারে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসছে না। তবে আর্থিকভাবে লাভজনক নীতি নেওয়া হলে অনেক প্রতিষ্ঠানই পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবে। যারা পুঁজিবাজারে আসবে তাদের জন্য বিশেষ ছাড়ও থাকতে হবে। বিদেশি যেসব প্রতিষ্ঠান এ দেশে ব্যবসা করছে তাদের যদি পুঁজিবাজারে আনা যায়, তাহলে আরো অনেক মানুষ পুঁজিবাজার নিয়ে আগ্রহী হবে। পুঁজিবাজার থেকে ব্যবসায়ে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নও সম্ভব হবে। তাহলে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ যেমন মিলবে একইভাবে দেশে শিল্পায়নও বাড়বে।’

খেলাপি ঋণ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে এফবিসিসিআই প্রধান বলেন, ‘আমরা সৎ ব্যবসায়ীদের পক্ষে, অসৎ ব্যবসায়ীদের পক্ষে এফবিসিসিআই কোনো ওকালতি কোনোদিন করেনি, করবেও না। এখন কথা হচ্ছে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হয় সেটা এক জিনিস আর ব্যবসা করতে গিয়ে কেউ যদি ঋণখেলাপি হয়, সেটা আরেক জিনিস।’

একটা ব্যবসা বা গ্রুপ দাঁড় করানো সহজ নয় মন্তব্য করে মাহবুবুল বলেন, ‘একটি বড় ব্যবসায়িক গ্রুপ হতে কমপক্ষে ৫০৬০ বছর লাগে। ব্যবসা করতেকরতে এক সময় ব্যবসাতে লস হতে পারে। একটা কোম্পানি বা দুইটা কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, তখন আমরা দেখি তার আরেকটা কোম্পানিকে (ঋণ দেওয়া) বন্ধ করে দিল। সে জন্য আমরা অনুরোধ করেছি যে আমার ১০টা কোম্পানি আছে, ব্যবসা করতে গিয়ে একটা কোম্পানি খেলাপি হয়ে গেল, ৯টা কোম্পানিকে যেন বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা দিয়ে সাহায্য করে বা ব্যবসাটা করতে দেয়।’

ঋণ দেওয়ার পর সেসব ঋণের দেখভাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যাকে ঋণ দিচ্ছেন তাকে ফলোআপ করতে হবে, যাতে সে ঋণখেলাপি না হয়। তার অর্থ স্থানান্তর করছে কিনা, সেটাও আপনাকে দেখতে হবে। এগুলো একটি মনিটরিং পলিসিতে আনতে হবে।’

এক বছর খারাপ হলে সেই ব্যবসা একেবারেই খারাপ হয়ে যায় না মন্তব্য করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘সে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিলে (ঋণ না দিলে) ওই কোম্পানি একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়।’

বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় করমুক্ত সীমা ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সুপারিশও করেছে সংগঠনটি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘কর ফাঁকি বের করতে কর কর্মকর্তাদের পুরস্কার দেওয়া হয়। এর ফলে আইনের অপপ্রয়োগ হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা কমানোর জন্য পুরস্কার প্রথা বাতিল করে বিকল্প প্রণোদনার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু বাজেটে এর প্রতিফলন দেয়া যায়নি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঘাইছড়িতে আবার ভোট স্থগিতবাঘাইছড়িতে আবার ভোট স্থগিত
পরবর্তী নিবন্ধঈদুল আজহায় পাঁচদিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা