ব্যাংক কর্মকর্তার ২১ বছরের কারাদণ্ড

গ্রাহকের এফডিআরের টাকা আত্মসাৎ আরো একজনের ১২ বছরের সাজা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৩ জুন, ২০২৩ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা (এফডিআর) আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ৩৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা হলেন মো. ইফতেখারুল কবির। তিনি ইস্টার্ন ব্যাংক চান্দগাঁও শাখার সাবেক প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার এবং নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার দারোগাহাট রোডের আলমগীর কবিরের ছেলে।

গতকাল চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ এই রায় ঘোষণা করেন। এসময় তিনি কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। রায়ে আজম চৌধুরী নামের অপর এক ব্যক্তিকে ১২ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কাঠগড়ায় হাজির না থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়। দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দণ্ডবিধি বিভিন্ন ধারায় ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের একটি ধারায় মো. ইফতেখারুল কবিরকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড, ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড, ৪২০ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড, ৪৬৭ ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড, ৪৭১ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫() ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ সকল সাজা এক সাথে চলবে জানিয়ে পিপি বলেন, অপর আসামি আজম খানকেও দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের একটি ধারায় ১২ বছরের সাজা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪০৯ ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড, ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড, ৪২০ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড, ৪৬৭ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড, ৪৭১ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫() ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধারায় আজম খানকে দেওয়া সকল সাজাও এক সাথে চলবে বলে জানান পিপি।

পিপি কাজী ছানোয়ার আহমদে লাভলু বলেন, আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দুই আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। রায়ে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার এজহারভুক্ত অপর দুই আসামিকে খালাস দেওয়া দেওয়া হয়। তারা হলেন, ইস্টার্ন ব্যাংক চান্দগাঁও শাখার আরেক সাবেক প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার সামিউল সাহেদ চৌধুরী ও মাহমুদুল হাসান নামের অপর এক ব্যক্তি। আদালতসূত্র জানায়, ইস্টার্ন ব্যাংক চান্দগাঁও শাখার প্রায়োরিটি গ্রাহক মিজানুর রহমানের ৪০ লাখ টাকার এফডিআর জালিয়াতিসহ ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ক্ষমতার অপব্যহার করে জালজালিয়াতি, প্রতারণা ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজসে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর মো. ইফতেখারুল কবিরসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। আদালতসূত্র আরো জানায়, তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মোছা. মাহমুদা আকতার চার জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দাখিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে পরের বছরের ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারী চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোট গ্রহণে ৪ হাজার কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি
পরবর্তী নিবন্ধআধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার লড়াইকে সম্মান করে চীন : রাষ্ট্রদূত