ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও পলিথিন জমা দিয়ে নিত্যপণ্য সংগ্রহ করার অভিনব উদ্যোগ

| মঙ্গলবার , ১১ মার্চ, ২০২৫ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে একটা অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যেউদ্যোগ পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও পলিথিন জমা দিয়ে সংগ্রহ করা যাবে ছোলা, খেজুর, চিড়া, আলু, পেঁয়াজ ও ডিমসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। নিম্ন আয়ের লোকজনদের জন্য প্রতি শুক্রবার ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ সুযোগ থাকছে নগরের চকবাজার, বহদ্দারহাট ও আগ্রাবাদ কাঁচাবাজারের সামনে স্থাপিত ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ কর্নার’এ। গত ৭ মার্চ সকালে চকবাজার কাঁচাবাজারে এ কর্নারের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। নগরের জলাবদ্ধতা ও প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় ক্লিন বাংলাদেশ’র উদ্যোগে এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ কর্নার’টি চালু হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষা ও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। ক্লিন বাংলাদেশ’র এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়, কারণ এটি জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নগর পরিচ্ছন্নতার জন্য একটি বাস্তবসম্মত সমাধান দিচ্ছে। আমরা চাই এই কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হোক এবং নগরবাসী প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আরও সচেতন হোক।’

পরিবেশ সুরক্ষায় জনসচেতনতা দরকার। আমরা সবসময় উন্নয়ন প্রত্যাশা করি। কিন্তু তা যেন পরিবেশকে ক্ষতি করে নয়। অল্পকিছুদিন আগে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, উন্নয়নকে সব সময় পরিবেশের বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে। আইন যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। তবে সবার আগে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা নিজেই একজন পরিবেশবিদ। তিনি পরিবেশ সুরক্ষায় ইতিমধ্যে ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার কমিশন ও বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশের নাগরিকদের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, ‘নাগরিক সম্পৃক্ততা থাকলেও অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে আন্দোলন করছে। ফলে দেশে অনেক যুগোপযোগী ও অত্যাধুনিক আইন থাকলেও যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সুফল পেতে চাইলে সবাইকে একই মঞ্চে আনতে হবে। এর মাধ্যমে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি সহজ হবে।’

ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও পলিথিন জমা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করার অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করে ক্লিন বাংলাদেশ সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ব্যাপারে ক্লিন বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা শওকত হোসেন জনি বলেন, ‘আমাদের শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো প্লাস্টিক বর্জ্য ও জলাবদ্ধতা। আমরা সবাই জানি, নালা ও ড্রেনগুলো প্লাস্টিকের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আমরা চেয়েছি সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান দিতেযেখানে পরিবেশ রক্ষা ও মানবিক সহায়তা একসাথে করা যায়। তাই, ‘প্লাস্টিক আনুন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিন’ এই ধারণা নিয়ে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এটি শুধু প্লাস্টিক দূষণ রোধ করবে না, বরং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রমজানের সময়ে সহায়তা হিসেবে কাজ করবে।’

পরিবেশ বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ এবং পরিবেশ দূষণের শিকার সচেতন জনগণের মতে, বৃক্ষ নিধন ছাড়াও প্রাণী বৈচিত্র্য রক্ষা না করা, রাসায়নিক সার ব্যবহার করা, কলকারখানার বর্জ্য, পলিথিন ও পোড়া জ্বালানি, কালো ধোঁয়া, কীটপতঙ্গ ধ্বংস করা, বস্তির উদ্ভব, ঘনবসতি, ধূমপান, পানিতে মলমূত্র ও মৃত প্রাণীদেহ ফেলা, আর্সেনিক ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, গাড়ির হর্ণ ও মিলকারখানার শব্দ এবং অসচেতনতা ও শিক্ষার অভাব সর্বোপরি আইন অমান্য করা ও দেশপ্রেমের অভাবই পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে কাজ করছে। তাই সময় থাকতেই পরিবেশ সুরক্ষায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে