ব্যবসা বাণিজ্য ও রপ্তানি খাতে নতুন পণ্যের চাহিদা

| সোমবার , ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই অর্থনীতির উন্নয়নে ১০ বছর মেয়াদী মাস্টার প্ল্যান করার উদ্যোগ নিয়েছে। কেননা তাদের এ কথা স্মরণে আছে যে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবার পর, বাংলাদেশের জন্য অসংখ্য সম্ভাবনা তৈরি হবে। ব্যবসা বাণিজ্য ও রপ্তানি খাতে চাহিদা তৈরি হবে নতুন পণ্যের। অর্থনীতির আকারও বড় হবে।
সরকারের নেয়া নানা অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হলে বিদেশী বিনিয়োগও বাড়বে। তখন পণ্য পরিবহন, বন্দরের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। এ সবকিছুকে বিবেচনা করে আগামী দশকে অর্থনীতির চাহিদার সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই সংগঠন।

গত ৪ ডিসেম্বর এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, এলডিসি পরবর্তী পরিবর্তিত বৈশ্বিক চাহিদা মোকাবিলায় খাতভিত্তিক সক্ষমতা বৃদ্ধি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে একটি ইনোভেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে এফবিসিসিআই। আগামী মাসেই এ সংক্রান্ত ধারণাপত্রটি সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুন:প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে এফবিসিসিআই’র সঙ্গে কাজ করছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। চলমান এ কার্যক্রম শেষ হলে, দেশের বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পুন: প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্যের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলেন সামপ্রতিক যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সফরের প্রসঙ্গ তুলে ধরে এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, বাংলাদেশি প্রবাসীদের ২য় ও ৩য় প্রজন্ম দেশ দুটির মূল অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে ঐসব প্রবাসী উদ্যোক্তাদের যুক্ত করতে পারলে, দেশ দুটির মূল বাজার ধরা সহজ হবে। এ লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মূল ধারার বাণিজ্য সংগঠনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে এফবিসিসিআই।
এদিকে গত ৩ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কোভিড মহামারীর জড়তা কাটিয়ে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে চাঙাভাব অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মঙ্গলবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ৯৭৯ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি এবং চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। খবর বিডিনিউজের।
একক মাস হিসেবে নভেম্বরেও রপ্তানি আয়ে ঊর্ধ্বগতির ধারা বিদ্যমান ছিল। এ মাসে বিদেশে পণ্য বিক্রি করে ৪০৪ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার আয় করেছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। এই আয় গত অর্থবছরের নভেম্বরের চেয়ে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং গত মাসের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। বরাবরের মতোই রপ্তানি প্রবৃদ্ধির এই ধারায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। তবে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন হানা দেওয়ার পর ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন রপ্তানিকারকরা।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, কোভিডের বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ার পর ক্রেতারা ব্যাপকভাবে রপ্তানি আদেশ দিয়েছিলেন, যার প্রভাবে এখনও রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধরায় রয়েছে। তবে নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার খবরে ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশগুলোতে তারা খুব হিসাব-নিকাশ কষছেন। ফলে আমাদের মধ্যেও শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশ কমে যায় কিনা। এখন পুরো পরিস্থিতিটি মানুষের ওপর ওমিক্রনের প্রভাবের ওপর নির্ভর করছে। গত মাসে জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের প্রভাবে রপ্তানি আয় কিছুটা কম হয়েছে বলে এই ব্যবসায়ীর ধারণা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশের ৭৫০টি পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। তবে করোনাকালে একেবারেই নতুন পণ্য হিসেবে রপ্তানি খাতে আয় বাড়িয়েছে অপ্রচলিত বেশকিছু পণ্য। আশার আলো দেখানো এসব পণ্য হচ্ছে- ওষুধ, ফলমূল, পাট ও পাটজাত পণ্য, কাঁচা পাট, শাক-সবজি, জুতা (চামড়া ব্যতীত), আসবাব, কার্পেট, জুট ইয়ার্ন এন্ড টোয়াইন, গলফ সাফট, তামাক, জাহাজ, চা, হ্যান্ডিক্রাফটস, ছাই। এসব পণ্য রপ্তানি করে গত অর্থবছরে আয় হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি ডলার। আয়ের পাশাপাশি রীতিমতো বৈচিত্র্য এনেছে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, গাউন, মেডিকেল ইকুইপমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী পণ্য। বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের চাহিদা এখন তুঙ্গে।
অপ্রচলিত এসব পণ্য নগদ প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসার কথা ভাবছে সরকার। নগদ প্রণোদনা দিতে সমপ্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ২১টি প্রস্তাব দিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশের ৭৫০টি পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৬০০ পণ্য বাড়তি সুযোগ পায়। বলা যায়, ব্যবসা বাণিজ্য ও রপ্তানি খাতে নতুন পণ্যের চাহিদা দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে-তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে