ব্যবসা-বাণিজ্য আর নতুন উদ্যোগে বিপ্লব ঘটবে

অস্থাবর সম্পদ বন্ধক রেখে ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ

| শনিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ সুবিধা প্রদান করার উদ্যোগ নিয়েছে। মধ্যম ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সুবিধা বাড়াতে অস্থাবর সম্পদ বন্ধক রেখেও ঋণ প্রাপ্তির এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৭ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘অস্থাবর সম্পদ বন্ধক রেখেও ঋণ মিলবে আইন হচ্ছে’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে, অস্থাবর সম্পদ বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার সুযোগ রেখে নতুন একটি আইন করার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে সরকার। জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন ২০২২’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি নতুন আইন। আমরা ব্যাংক থেকে যেসব লোন দিই, তার বিপরীতে একটা ইক্যুইটি দিতে হয়। স্থাবর সম্পত্তি বা ক্যাপিটাল ইকুইপমেন্ট থেকে সেগুলো দেওয়া হয়। নতুন আইনে অস্থাবর সম্পত্তিকে ইক্যুইটি হিসেবে নেওয়ার জন্য ব্যাংকিং ডিভিশন থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মানে এখন থেকে অস্থাবর সম্পত্তিও ইক্যুইটি (বন্ধক) হিসেবে গ্রহণ করা যাবে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এ আইন পাস হলে অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতেও ঋণ নেওয়া যাবে। অর্থাৎ ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত, বন্ড, দামি গাড়ি, সোনা-রূপা এমনকি মেধাস্বত্ব বন্ধক রেখেও মিলবে ঋণ। এছাড়া খনিজ সম্পদ, কৃষিজাতপণ্য, প্রক্রিয়াজাত মাছ ও জলজ প্রাণী, গবাদি পশু, রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুতের কাঁচামাল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত, নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেট, কোনো সেবার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে সেবা গ্রহীতার মূল্য পরিশোধের স্বীকৃতিও ঋণের জন্য বন্ধক হিসেবে নিতে পারবে ব্যাংক।
প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে বিপুলসংখ্যক নতুন উদ্যোক্তা, ব্যবসা ও বিনিয়োগকারী তৈরি হবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘এতে নতুন নতুন কারখানা গড়ে উঠবে। ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল হবে। উৎপাদন, রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহের প্রসার ঘটবে। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’
আসলে আমাদের দেশে বিনিয়োগের অভাবে অনেকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ব্যবসাকে চালিয়ে নিতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্যাংক ঋণ না পাওয়া ও অবকাঠামো সমস্যাই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। যে কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়েছেন। ফলে তাঁদের পণ্য বাজারে প্রতিযোগিতায় আসতে পারছে না। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আপসোস করেন যে তাঁরা অর্থায়নের অভাবে ব্যবসা বড় করতে পারেন না। তাঁদের যে সময়ে অর্থের দরকার, সে সময়ে তা তাঁরা পাচ্ছেন না। সরকার যেসব সুবিধা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দিচ্ছে, সেগুলো পেতে যেসব দলিলের প্রয়োজন, এ ব্যাপারেও তাঁরা সেভাবে অবগত নন। এছাড়া ব্যাংক যখন কাউকে ঋণ দেয়, সেই অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই জমি বা বাড়ির মত স্থাবর সম্পদ বন্ধক রাখা হয়, নির্ধারিত সময়ে ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অনেকের স্থাবর সম্পত্তি থাকে না। ফলে ঋণও নেওয়া হয় না। কিন্তু এখন অস্থাবর সম্পদ বন্ধক রাখার নিয়ম করে আইন হচ্ছে বলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা আশান্বিত হয়ে উঠেছেন।
এখন বাংলাদেশে অস্থাবর সম্পদ বন্ধক রাখার সুযোগ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, মধ্যম ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বন্ধক দেওয়ার মত স্থাবর সম্পত্তি নেই। তারা যেন তাদের অস্থাবর সম্পত্তি জমা দিয়ে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। এটা বিনিয়োগের ভিত্তিটাকে অনেক বড় করবে।
এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, অস্থাবর সম্পদ বন্ধক রেখে ঋণ মিললে ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো গতি আসবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বেশি লাভবান হবেন। অভিযোগ আছে, ব্যাংকের ছোট গ্রাহকদের হয়রানি নিত্যদিনের। আবার ঋণ পেতেও রয়েছে বিভিন্ন শর্তের বেড়াজাল। ক্ষুদ্র উদ্যোগ ছাড়াও ছোট আকারের ব্যক্তিগত ঋণ, ক্রেডিট কার্ড, গাড়ি-বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ঋণ নিয়েও হয়রানির যেন অন্ত নেই। এতোসব হয়রানির পরও ঋণ মেলে না অনেক সময়। এক্ষেত্রে সরকারের নতুন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এতোদিন স্থাবর সম্পত্তির অভাবে ঋণের যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও অনেকে ঋণ পাননি বলে অর্থনীতি মন্থর ছিল। এই আইন পাস হলে ব্যবসা-বাণিজ্য আর নতুন উদ্যোগে বিপ্লব ঘটবে। তবে অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতির ঝুঁকি বেড়ে যাবে বলেও অনেকে আশংকা করছেন। সেসব ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে