রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তবর্তী রাঙামাটির কাউখালী সুগারমিল এলাকার পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. মামুন মাঝির (৩৮) বস্তাবন্দী দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। অপহরণের ৮ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে কাউখালীর দুর্গম মাঝের পাড়া এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় জড়িত মূল আসামি মো. কামরুল ইসলামকে (৩০) গত সোমবার দিবাগত রাতে লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হলে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে লাশটি উদ্ধার করে কাউখালী থানা পুলিশ। আসামি কামরুলের স্ত্রী রিয়া আক্তার সাথীকেও (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে মো. আনোয়ার (২০) নামে একজনকে ধরে স্থানীয়রা পুলিশে দিলে তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কামরুলের সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়। নিহত মামুন রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তবর্তী কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের সুগারমিল আদর্শগ্রাম এলাকার মো. আলী আহম্মদের ছেলে। গ্রেপ্তার কামরুলও একই এলাকার মো. সেলিম সওদাগরের ছেলে এবং মামুমের পোল্ট্রি ফার্মের কর্মচারী হিসেবে একসময় কাজ করতেন। গতকাল আসরের নামাজের পর নিজ এলাকার মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে মামুনের লাশ দাফন করা হয়।
পুলিশ হেফাজতে কামরুল জানায়, মামুনকে ব্যবসার কথা বলে রাণীরহাট এলাকায় তার ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে চায়ের সাথে নেশাজাতীয় খাবার খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। পরে তাকে হত্যা করে লাশ দ্বিখণ্ডিত করে বস্তায় ভরে স্ত্রীসহ কাউখালী উপজেলার মাঝেরপাড়া এলাকায় তার ফুফা শ্বশুরের বাড়ির পাশে লাশ মাটিতে পুঁতে রেখে পালিয়ে যায়। পুরো কাজে সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী সাথী আক্তার। বিভিন্ন কিলিং মুভি দেখেই এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে কামরুল।
কাউখালী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, মূলত ব্যবসায়ীক লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই ব্যবসায়ী মামুনকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে ঘাতক কামরুল। এ ঘটনায় তথ্য–প্রযুক্তির সহায়তায় কামরুলকে লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওসি বলেন, মামুনকে অপহরণের পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তবে এ টাকা পরিশোধের আগেই সাবেক কর্মচারীর হাতে খুন হন মামুন। কামরুলের স্ত্রী রিয়া আক্তার সাথীকেও আইনের আওতায় আনা হয়। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুয়ায়ী কাউখালীর দুর্গম নাইল্যাছড়ির মাঝের পাড়া এলাকা থেকে ব্যবসায়ী মামুনের লাশ উদ্ধার হয়। সেখানে তাকে বস্তাবন্দী করে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। এ ঘটনার সাথে কামরুল, তার স্ত্রী সাথী এবং এর আগে গ্রেফতার রাঙ্গুনিয়ার ঠান্ডাছড়ি এলাকার আনোয়ার জড়িত ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। লাশটি উদ্ধার করে রাঙ্গমাটি মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী সীমা আক্তার জানান, তার স্বামী মামুন পোল্ট্রি ব্যবসার পাশাপাশি ইটভাটার মাঝি হিসেবে কাজ করতেন। ঘাতক কামরুলও তার স্বামীর কর্মচারী ছিলেন। গত ৭ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে মামুন ঘর থেকে বের হয়। এরপর রাত ৯টার দিকে স্ত্রীকে ফোন করে দুটি চেক রাণীরহাট বাজারে পাঠাতে বলেন। নিজে ঝামেলায় আছেন জানিয়ে স্ত্রীকে চিন্তা না করার জন্য বলেন তিনি। রাণীরহাট বাজারে মামুনের পিতা আলী আহম্মদের কাছ থেকে চেক দুটি গ্রহণ করেন আনোয়ার। এরপর থেকে মামুনের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর গত ৮ জুলাই মামুনের স্ত্রীর ফোনে মামুনের নম্বর থেকে ফোন করা হয়। এ সময় তাকে অপহরণের খবর দেওয়া হয়। এ জন্য ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণও দাবি করা হয়। একইদিনে কাউখালী থানায় মামুনের স্ত্রী নিখোঁজ ডায়েরি করেন। স্থানীয় আবদুর রহিম জানান, তার লাশ উদ্ধারের পর কাউখালী ও রাঙ্গুনিয়াজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সকলের পরিচিত মুখ ব্যবসায়ী মামুনের এমন পরিণতিতে শোক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বৃদ্ধ পিতা–মাতা, স্ত্রী এবং ছোট তিন সন্তান নিয়ে ছিল মামুনের সংসার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিতে হারিয়ে কান্না থামছে না তাদের। ঘাতকদের সবোর্চ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম বলেন, নিহত মামুনের সাবেক কর্মচারী ছিলেন ঘাতক কামরুল। কিন্তু কর্মচারী থাকলেও সমপ্রতি তারা দুজনে মিলে শেয়ারে ব্যবসা করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘাতক কামরুলকে আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ড চাওয়া হবে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করা হবে।