বাংলাদেশ–ভারতের ময়দানি লড়াইয়ে দুই দেশের দুই ফুটবলারের দিকে তাকিয়ে থাকবেন ফুটবল ভক্তরা। বাংলাদেশের হামজা চৌধুরী এবং ভারতের সুনীল ছেত্রী। একজন ১৫২ ম্যাচ খেলে, ৯৫ গোল করে বড় তারকা। অন্যজন জাতীয় দলে খেলতে নামার আগেই বড় তারকা। আসলেও তাই। কিংবদন্তি হতে সুনিল ছেত্রীকে পাড়ি দিতে হয়েছে বন্ধুর পথ, বছরের পর বছর, ম্যাচের পর ম্যাচ দলের গোলের চাহিদা পূরণ করতে হয়েছে। সেখানে হামজা স্রেফ বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তুলেই চলে এসেছেন পাদপ্রদীপের আলোয়। ভারত–বাংলাদেশ ম্যাচের মতো তাই এই দুই তারকা নিয়ে চলছে তুমুল চর্চা। জাতীয় দলে ছেত্রী পরীক্ষিত একজন। ভারতের সর্বোচ্চ গোলদাতা, আন্তর্জাতিক ফুটবলে চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতাও (৯৫টি) তিনি। যে তালিকায় তার সামনে কেবল ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসির মতো মহাতারকার। ভারতীয় ফুটবলেও ছেত্রী মহাতারকা। গত জুনে অবসর নেওয়ার পর এই মার্চেই অবসর ভেঙে ফিরেছেন তিনি, ফেরাটা রাঙিয়েছেন মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে গোল করে। ক্লাব ফুটবলে অবশ্য হামজার প্রাপ্তিও কম নয়। কোনো বাংলাদেশির ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা চাট্টিখানি বিষয় নয়। লেস্টার সিটির প্রিমিয়ার লিগ জয়ের রূপকথা লেখা দেখেছেন তিনি, দলটির হয়ে খেলেছেন। লেস্টারের হয়ে এফএ কাপ জয়ের অভিজ্ঞতাও আছে হামজার। বর্তমানে খেলছেন ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপের দল শেফিল্ড ইউনাইটেডে। হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ছেত্রী অবসর ভেঙে ফেরার মধ্যে সংযোগও দেখছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এমন কথাও অনেকে লিখেছেন, হামজার কারণে ‘ভয়’ পেয়েছে ভারত। তবে হামজা যে একটা ‘ফ্যাক্ট’, সেটা ভারত কোচ মানোলো মার্কেসের কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, ‘এটা কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, এশিয়ার ফুটবলের জন্য ভালো।’ শিলংয়ে এসে অবশ্য এই ম্যাচ নিয়ে কোনো কথা বলেননি হামজা। গণমাধ্যম থেকে দূরে থেকেছেন তিনি। তবে ইংল্যান্ড থেকে হবিগঞ্জের স্নানঘাটে পৈতৃক বাড়িতে এসেই বলেছিলেন, ‘জিততে চাই।’ তার এই চাওয়া পূরণ হচ্ছে কিনা, উত্তর মিলবে আজ মঙ্গলবার ম্যাচ শেষে। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুখোমুখি হবে দুই দল। ম্যাচটা তাই ভারত বনাম বাংলাদেশ নয়, অনেকের দৃষ্টিতে হামজা বনাম ছেত্রীরও। জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামের প্রবেশ পথে ছেত্রীর ছবি টানানো, আছে রাহুল ভেকে, সন্দেশ জিঙ্গানদের ছবি। অতিথি দলের কারো ছবি অবশ্য নেই। তবে সংবাদ সম্মেলন জুড়ে ছেত্রীর চেয়ে হামজাকে নিয়েই কথা হয়েছে বেশি। অন্যরকম ‘লড়াইয়ে’ জিতেছেন হামজা। এবার অপেক্ষা মাঠের লড়াইয়ে জেতার। অল্প কদিনেই নতুন সতীর্থদের সঙ্গে মিশে গেছেন তিনি। অনুশীলনে সবার সাথে মেতে থাকতে দেখা গেছে। এবার তাকে ছেত্রির তান কেটে দেওয়ার কাজটুকু করতে হবে সূচারুভাবে। কেননা, বাংলাদেশ ছেত্রির ‘প্রিয় প্রতিপক্ষ।’ এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ বার গোলের উৎসবে ডানা মেলেছেন তিনি। এই গোলমেশিন বিকল করতে হবে হামজাকে। তা সেটা করতে পারলে, তিনি হয়ে উঠবেন সত্যিকারের তারকা।