ব্যতিক্রমী বেগুনি ধান

চাষে লাভ, বাড়ছে আগ্রহ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ১ মে, ২০২১ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

সবুজ রঙের ধানগাছের পরিবর্তে কৃষকের জমিতে শোভা পাচ্ছে বেগুনি ধান (পার্পল লিফ রাইস)। চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো রাঙ্গুনিয়ায় গত বছর এই জাতের ধানের চাষাবাদ হয়েছিল। প্রথমবারে পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতক পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ হলেও এবার দুই হেক্টর জমিতে বেগুনি ধান চাষ হয়েছে। এতে সফলও হয়েছেন কৃষকরা। হেক্টর প্রতি ৬টন করে ফলন আসবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। বীজ ধান হিসেবে প্রতি কেজি ধান বিক্রি হয় ২০০-৩০০ টাকা হারে। একদিকে ভিন্ন জাত, অন্যদিকে বাজারে এর ভাল দাম ও বাড়তি আকর্ষণ থাকায় এ ধানের প্রতি কৃষকসহ স্থানীয়দের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ধান। গতবার নারায়ণগঞ্জ থেকে ৩ হাজার টাকা করে দুই কেজি বীজ সংগ্রহ করে চট্টগ্রামের মধ্যে প্রথম রাঙ্গুনিয়ায় এই ধরনের চাষাবাদ শুরু করা হয়েছিল। তবে এবার একাধিক কৃষক এ জাতের চাষাবাদ করেছেন। রোপণ থেকে ধান পাকতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ১৩০-১৪০ দিন। অন্য জাতের ধানের চেয়ে এ ধানের গোছা প্রতি কুশির পরিমাণ বেশি থাকায় একর প্রতি ফলনও বেশ ভালো। অন্য সব ধানের তুলনায় এ ধান চিকন, তবে পুষ্টিগুণ অনেক। এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু।
সরেজমিনে গুমাইবিলে গিয়ে দেখা যায়, রোদের প্রখরতায় বেগুনি রং আরও গাঢ় আকার ধারণ করেছে। বিস্তৃত সবুজ ধান খেতের মাঝে বেগুনি রঙের ধান গাছ দেখতে ব্যতিক্রমী এবং চোখজুড়ানো। প্রতিদিন এ ধানের খেত দেখতে আগ্রহী মানুষরা ভিড় করছেন। অনেক কৃষক এই ধানের চাষ করতে বীজ চেয়েছেন বলে জানাচ্ছেন চাষিরা।
বেগুনি ধান চাষি মো. নুর উদ্দীন জানান, এ বছর এক হেক্টর জমিতে বেগুনি ধানের চাষাবাদ করেছি। ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। সখের বশে বীজ সংগ্রহ করে এ ধানের চাষ করি। এখন দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে ধানের জমি। পথচারীসহ অনেকেই এ ধান দেখতে আসেন।
কৃষক মো. সিরাজ, মো. ইউনুছ, মো. আইয়ুব মেম্বার, জেবর মুল্লুকসহ অনেক কৃষক বেগুনি ধানের চাষাবাদ করেছেন। তারা বলেন, প্রতিদিন এলাকার কৃষকরা ছাড়াও উৎসুক মানুষ নতুন জাতের এই ধান দেখতে ছুটে আসছেন। ছবিও তুলছেন অনেকে। সবার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে এ বেগুনি ধান নিয়ে। অনেকে বীজ পেতে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করছেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তর কুমার শীল বলেন, চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো রাঙ্গুনিয়ায় দু’জন কৃষক ব্যতিক্রমী এ চাষাবাদ করেছিল। তবে এবার অনেকেই এই ধরনের চাষাবাদ করেছেন। এটির বিশেষত্ব হচ্ছে ধানের গাছ এবং ধান দুটিই বেগুনি। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই বেগুনি ধানে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান আছে, যা মানুষের শরীরে এন্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার জানান, বোরো মৌসুমে সাধারণত এই ধরনের চাষাবাদ হয়। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এই ধানক্ষেতগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অনেকটা উফশী জাতের এ ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেকটাই কম হয়। এই জাতের চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। উপজেলার অনেক কৃষক এমনকি রাঙ্গুনিয়ার বাইরেও অনেকে এ ধরনের চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছড়ার পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ভাইবোনসহ ৩ শিশুর
পরবর্তী নিবন্ধআজ থেকে কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ