একদিন সময় আমাদের দরজায় কড়া নেড়েছিল। সেদিন আমরা সময়ের ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। সেটা ইতিহাস হয়ে গেল। আমরা ষাটের দশকের কথা বলছি। সেই সময় অনেক কিছু হয়েছিল। ছাত্র আন্দোলন, ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা মামলা বাতিলের জন্য আন্দোলন, ৬৯–এর গণঅভ্যুত্থানে আইয়ুবের পতন; অবশেষে তারা ১৯৭০ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হলো। পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তি এক ভোটের নীতিতে সাধারণ নির্বাচন হলো। আওয়ামী লীগ পাকিস্তান পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। সেটাই আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। আজকে আমরা যারা সংবর্ধনা নিচ্ছি, আমরা সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছিলাম। এরপর ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ‘মূলধারা ৭১’ সংগঠনের উদ্যোগে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী তিন এমপির সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। সেখানে সংবর্ধিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাঙালি একটি জাতিসত্তা হিসেবে গড়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিলেন। আমরা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলাম। আজকে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমাদের যে বিরল সম্মানে ভূষিত করেছেন, সেজন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। স্বাধীনতার পর এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠান আমরা দেখিনি। আপনাদের এই আয়োজন একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ১৯৬৯ সালে কক্সবাজারে তাঁর পিতার হোটেল সায়মনে বঙ্গবন্ধুর সম্মানে আয়োজিত একটি ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের কথা স্মরণ করে বলেন, তোরা আমাকে ১৫১টা সিট এনে দে, আমি দেখাইয়া দিব। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোরা মৌলভী ফরিদকে ডিফিট দিতে পারবি তো? এরপর মোশাররফ হোসেন ও মির্জা মনসুর স্বাধীন বাংলা বেতারে মেজর জিয়ার নাটকীয় ঘটনার অবতারণা, তাদের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান এবং সামরিক ভবনে ট্রেনিং গ্রহণ করে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
সংবর্ধিত অন্য দুই এমপি হলেন আবু ছালেহ (সাতকানিয়া) ও মির্জা আবু মনসুর (ফটিকছড়ি)। সংবর্ধনার জবাবে ১৯৭০–এর এমএনএ আবু ছালেহ বলেন, আমরা স্বাধীনতা চেয়েছি। স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। জয় লাভ করেছি। আজকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ৭১–এর পরাজিত শক্তি পাকিস্তান আজকে আমাদের অনেক পেছনে পড়ে আছে। এতেই আমাদের শান্তি।
৭০–এর এমপিএ মির্জা আবু মনসুর বলেন, আমাদের এক লক্ষ্য এক উদ্দেশ্য ছিল বলেই আমরা দেশ স্বাধীন করতে পেরেছি। ৭০ সালে আমি প্রদেশিক পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমাকে ছাত্রকাল থেকেই স্নেহ করতেন। এজন্য ৭০–এর নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আমরা মাত্র ১৩ জন এমপি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দিন দিন উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে। এটাই আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সান্ত্বনা। এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু নেই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘মূলধারা ৭১’ এর সভাপতি সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দীন চৌধুরী। বক্তব্য দেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন শাহ, মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুণ লুবনা, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী এবং মুক্তিযোদ্ধা কিরণ লাল আচার্য্য।
এর আগে বাচিক শিল্পী দিলরুবা খানম ছুটির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে সংবর্ধিত তিন অতিথিকে পুষ্পার্ঘ, ক্রেস্ট, সম্মাননা ও উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে গান গেয়ে মুগ্ধ করেন রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী শিলা চৌধুরী।