ব্যক্তি স্বার্থে আইসিটি খাতে নেওয়া হয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

শ্বেতপত্রের প্রতিবেদন

| বৃহস্পতিবার , ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই ডিজিটাল এবং পরে স্মার্ট বাংলাদেশের নামে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে (আইসিটি) একের পর এক প্রকল্প হাতে নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। চটকদার নামে এসব প্রকল্প আর কর্মসূচি নেওয়া হলেও সুফল মেলেনি আইসিটি খাতে বরং অর্থনীতির শ্বেতপত্রে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আইসিটি। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে ব্যক্তি স্বার্থে নেওয়া হয়েছে হাজার কোটি টাকার তথ্য প্রযুক্তি প্রকল্প যেখান থেকে লোপাট হয়েছে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ। খবর বাসসের।

ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরে শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের দুর্নীতিঅনিয়ম তদন্তে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয়। সেই মোতাবেক শ্বেতপত্র প্রণয়নে গঠিত কমিটি গত ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতকে দুর্নীতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কার্যক্রম ও প্রযুক্তিগত নতুনত্বের কারণে আইসিটি খাত দুর্নীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

এ বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাসসকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাত (আইসিটি) বাংলাদেশের জন্য একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং আমাদের জন্য নতুন ক্ষেত্র। নতুনত্বের সুযোগ নিয়ে এবং অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে প্রকল্পের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করা হয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা রাজনৈতিক বিবেচনায় হাতে গোনা কিছুসংখ্যক ব্যক্তি এসব প্রকল্পের কাজ পেয়েছে, যারা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অর্থ লোপাট করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

দেবপ্রিয় বলেন, কেনাকাটার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার অধিক মূল্যে কেনা হয়। আর একটি বিষয় হলো অনেক প্রকল্প বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করার কথা বলে আরও বড় অঙ্কের প্রকল্প করা হয়েছে যেগুলোর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা সেটাও যাচাই বাছাই করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পে যে ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন বা কাজের কথা বলা হয়েছেতা আদৌ হয়নি। এছাড়া আইটি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভাতা বিতরণের ক্ষেত্রেও দুর্নীর্তির চিত্র উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে দেশের সুরক্ষা, দক্ষতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনায় আইসিটি খাতে প্রকল্প গ্রহণ করাটা জরুরি। তবে সেটা অব্যশই দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। আইসিটি খাতে দুর্নীতি ও অপচয় রোধে সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পুনর্বিবেচনা করে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়ার তাগিদ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

আইসিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫৫টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় যার ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। আর ৩৪টি কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৭৩ কোটি টাকা। ব্যয়বহুল প্রকল্প আর কর্মসূচি হাতে নেওয়া হলেও সুফল মেলেনি। তার প্রমাণ, আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেঙে ১৭০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম।

অর্থনীতির শ্বেতপত্রে আইসিটিকে দুর্নীতির অন্যতম খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা আইসিটি খাতের একটি প্রকল্পকে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন, যেটিতে ৫২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও খরচ করা হয় ৭৭৪ কোটি টাকা। দেবপ্রিয় অভিযোগ করেছেন, যাচাইবাছাই ছাড়াই বড় বড় প্রকল্প পাস করা হয়েছে। সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বড় দুর্নীতির।

শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছেগুরুত্বপূর্ণ এই খাতে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থে উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই ঘটনা যুবসমাজ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের হতাশ করে, কারণ জনগণের করের অর্থ অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রকল্পে অর্থ অপচয় করা হয়। এসব প্রকল্পে স্বচ্ছতার অভাব ছিল এবং অভিযোগ ওঠে যে, এগুলো তৎকালীন শাসন ক্ষমতার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সুবিধা দিতে তৈরি করা হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেড়েছে সরবরাহ, খাতুনগঞ্জে কমছে চিনির দাম
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক এমপি এম এ লতিফ দুই দিনের রিমান্ডে