অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যক্তির জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করবে না তুলে ধরে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এলসি (ঋণপত্র) খুলতে দিয়ে এস আলম ও সামিটের কারখানাগুলোকে সচল রাখা হয়েছে। তার ভাষ্য, আমরা যেটা করেছি, ধরুন বেক্সিমকো টেক্সটাইল ছাড়া আর প্রতিটা প্রতিষ্ঠানকেই কিন্তু আমরা সচল রেখেছি। এসএস পাওয়ারও সচল আছে, কারণ এটা দেশের সম্পদ। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত বিনিয়োগ সংলাপে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তোলেন, যারা অর্থপাচার করেছে তারা বহাল তবিয়তে আছেন। এর জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এস আলম দেশে না থাকতে পারে, তাকে থাকতে দেওয়া হোক না হোক– সেটা পরবর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিবে। আমাদের সামিট, তারা দেশে নাই, কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠান প্রত্যেকটাই চলছে। বেঙ্মিকো, শুধু বেঙ্মিকো টেঙটাইল ছাড়া প্রতিটা প্রতিষ্ঠান চলছে। আমরা চাচ্ছি না যে কোথাও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাক। ব্যক্তির জন্য আমরা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেব না। খবর বিডিনিউজের।
আহসান মনসুর বলেন, প্রতিষ্ঠান তো জাতীয় সম্পদ। জাতীয় সম্পদ। কর্মসংস্থান হচ্ছে, আমাদের সাধারণ মানুষের জীবিকার অর্জনের জায়গা। এখানে আমাদেরকে আইনগতভাবে… একই সময় কারখানাগুলোকে চালু রেখে, তাদেরকে এলসি খুলতে দিয়ে আমরা তাদেরকে চালু রেখেছি। কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয় নাই। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেঙ্মিকো, সামিট, এস আলমসহ দেশের কয়েকটি শিল্পগ্রুপের বিরুদ্ধে আর্থিক খাতে ঋণ জালিয়াতি, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। অভ্যুত্থানের পর বেঙ্মিকোর ভাইস চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হন। এস আলম গ্রুপের কর্ণধার এস আলম বিদেশে চলে গেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তাদের পরিবারের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা, স্থাবর–অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ, মালিকানা হস্তান্তর বন্ধ রাখার মতো পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গভর্নর বলেন, এখানে ওই ডান্ডা দিয়ে করার কিছু নাই, আমাকে আইনগতভাবেই এগোতে হবে। আমরা যারা অর্থপাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা করেছি। এখন কোর্টকে তো আর আমি এগিয়ে নিতে পারব না আমার সময়ে, তাদের সময়েই তারা যাচ্ছে। সেটাকেও আমরা বিবেচনায় নিয়েছি।
ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ ঠেকতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা অর্থ ঋণ আদালতের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তালিকা করছেন। আদালতের রায়ের পর আইনি বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য টাকা খরচের দিকও তুলে ধরেন আহসান মনসুর।
এই পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে তারা চেষ্টা করবেন যাতে টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়ার প্রবণতা ঠেকিয়ে দেওয়া যায়। যে আমি টাকা নিলাম, তারপরে একটা আইনজীবী তো আছে আমার সাথে, তাকে দিয়েই আমি ম্যানিপুলেট করে এটাকে ২০ বছর বিনা সুদে চালিয়ে নিলাম। এই প্রবণতা তো আছে এবং ব্যবসায়ীদের একটা অংশের মধ্যেই আছে। এবং তারা, কিন্তু তাদেরকে নিয়ে আমাদের চলতে হবে।
গভর্নরের ভাষ্যমতে, এস আলমের প্রতিষ্ঠান চালু রাখার জন্য তিনি নিজে ব্যাংকারদের সঙ্গে বসেছেন। এসএস পাওয়ারের জন্য আমি বিশেষ করে, তিনবার আমি বসেছি তাদের সাথে এবং ব্যাংকারদের সাথে। যাতে এসএস পাওয়ারের ওই প্রোডাকশন… যেখানে আড়াই বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করা হয়েছে, এটা তো আমাদের জাতীয় সম্পদ– সেটা যেন বন্ধ না হয়ে যায়। এবং বিদেশি বিনিয়োগকারী সেখানে আছে। ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ মালিকানা হচ্ছে চীনাদের, ২৫ শতাংশ এস আলমের। আর এই ২৫ শতাংশ এস আলমেরটা তো আমরা ব্লক করেই রাখছি। তা আমাদের হাতেই আছে, এটা তো অলরেডি কনফিসকেটেড। আমি কি, এসএস পাওয়ার কি বন্ধ করে দেব? অবশ্যই নয়।
তিনি বলেন, আমাদের কৌশলটা হচ্ছে যে আইনের প্রয়োগ হবে, আইনকে আমরা কঠোরভাবেই নেব, ব্যক্তিকে আমরা ছাড়ব না, কিন্তু প্রতিষ্ঠানকে আমরা বন্ধ করতে দেব না। এবং একটা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয় নাই, এই বেঙ্মিকো টেঙটাইল ছাড়া, যেটা টেকসই ছিল না।
স্থানীয় অংশীজনদের সঙ্গে এই বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যু ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফায়জুল কবির খান। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী সভাপতিত্বে সংলাপে বিশেষ অতিথিদের মধ্যে আহসান এইচ মনসুর ছাড়াও ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী, এনবিআর চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুর রহমান।











