এ পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ অন্য কোনো জীব নেই। শিক্ষায়, মর্যাদায়, বিবেক, বুদ্ধি ও আত্মোপলব্ধিতে মানুষই সেরা। একজন ব্যক্তির এসব গুণ থাকা সত্ত্েবও যদি তার পার্সোনালিটি বা ব্যক্তিত্ব না থাকে তবে সে অসম্পূর্ণ মানুষ। চরিত্র যেমন মানুষের অমূল্য সম্পদ ঠিক তেমনি ব্যক্তিত্বও মানুষের একটি অপরিহার্য গুণ। সাধারণভাবে ব্যক্তিত্ব বলতে বুঝায়, ব্যক্তির সেই বৈশিষ্ট্য যার দ্বারা সে অন্য ব্যক্তির থেকে স্বতন্ত্র। প্রতিটি ব্যক্তির একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে যা তার কাজের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে এবং ব্যক্তিত্বের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হিসেবে তাকে চিহ্নিত করে। ব্যক্তিত্বের কারণে মানুষ মহান হয়ে ওঠে। ব্যক্তিত্ববান হয়ে উঠার অন্যতম সোপান ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। শিক্ষা, মর্যাদা, পরিচিতি যাই থাকুক না কেন, ব্যক্তিত্ব না থাকলে সে যথার্থ মানুষ নয়। সৌন্দর্য সাময়িক কিন্তু ব্যক্তিত্ব চিরকালীন। সৌন্দর্য শুধু চোখকে তৃপ্তি দেয় আর ব্যক্তিত্ব পুরো হৃদয়কে স্পর্শ করে। তাই সৌন্দর্যের রূপে মুগ্ধ না হয়ে ব্যক্তিত্বের গুণে মনোযোগী হওয়া আবশ্যক। কোনো ব্যক্তির মধ্যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সহ অসদাচরণ দেখা দিলে তার ব্যক্তিত্ববোধ ক্ষুণ্ণ হয়। কথায় কথায় মিথ্যাচারণ করলে, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কথা বললে কিংবা যার যেটুকু আছে তার চেয়ে বাড়িয়ে বললে ব্যক্তিত্বের অস্তিত্ব থাকে না। লোকটা খুবই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন – একথা বললে বুঝতে হবে যে তার আচরণ মার্জিত ও রুচিশীল। অর্থাৎ, বাহ্যিক আচরণ ছাড়া ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পেতে পারে না। মানসিকতায় ব্যক্তিত্বের মূল উৎস। এ মানসিকতা পুরোপুরি মন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যেখানে জ্ঞানের প্রভাব অপরিসীম। জ্ঞান ব্যক্তিত্বের অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তিত্বের আরেকটি উপাদান হচ্ছে অনুভূতি। অনুভূতিহীন ব্যক্তিরা ব্যক্তিত্বহীন হতে পারে। জ্ঞানীরা অনুভূতিসম্পন্ন বলেই মান সম্মানবোধ নিয়ে তাঁরা সচেতন থাকে, ঠিক এ কারণে ব্যক্তিত্ব যাতে বিনষ্ট না হয় এমন কাজ থেকে তারা দূরে থাকেন। এডিসন বলেছেন, একজন মানুষ তখনই চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারে যখন সে অনর্থক কথা এবং অপকর্মকে পরিত্যাগ করতে পারে। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি স্থান কাল পাত্র অনুযায়ী কথা বলে এবং অপকর্ম থেকে দূরে থাকে। এর সাথে মার্জিত রুচিসম্পন্ন পোশাকের দিকটাও গুরুত্ব দেয়, সেই যথার্থ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তবে ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই।