বেণীমাধব বড়ুয়া – বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ও বৌদ্ধশাস্ত্রজ্ঞ। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, দর্শন, সংস্কৃতি, শিলালিপি, ভাস্কর্য এবং বৌদ্ধশাস্ত্রের নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। এসকল বিষয়ে তিনি ছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত। বেণীমাধব বড়ুয়ার জন্ম ১৮৮৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান থানার মহামুনি অঞ্চলের পাহাড়তলী গ্রামে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফ.এ, বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে অনার্স সহ বি.এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিতে কৃতিত্বের সাথে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করে স্বর্ণপদক অর্জনের কৃতিত্ব ছিল তাঁর। পরবর্তী সময়ে বৌদ্ধ শাস্ত্র ও ভারতীয় দর্শন বিষয়ে গবেষণা করে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি অর্জন করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে তাঁর পেশাগত জীবনের সূচনা। শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস, দর্শন প্রভৃতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। বৌদ্ধ শাস্ত্রের একজন বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে একাধিকবার শ্রীলঙ্কা সফর করেন। কলকাতা মহাবোধী সোসাইটির কার্যকরী কমিটির সদস্য, সিংহল বিদ্যালংকার পরিষদের কার্যকরী কমিটির সদস্য, ইরান সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা, কলকাতা ভারতী মহাবিদ্যালয়ের পরিচালক মণ্ডলীর সভাপতি, রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল ও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য সহ আরো বেশ কিছু বিদ্বৎ প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বেণীমাধব বড়ুয়া। তাঁর সুদক্ষ সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো ‘ইন্ডিয়ান কালচার’, ‘বুড্ডিস্ট ইন্ডিয়া’, ‘জগজ্জ্যোতি’, ‘বিশ্ববাণী’ ইত্যাদি পত্রিকা। দীর্ঘ পনেরো বছর বেণীমাধব বুড্ডিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ইংরেজি ও বাংলায় তাঁর রচিত বেশ কিছু গ্রন্থ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে : ‘গয়া অ্যান্ড বুদ্ধ গয়া’, ‘অশোকা এডিক্টস ইন নিউ লাইট’, ‘লোকনীতি’, ‘মণিরত্নমালা’, ‘বৌদ্ধ গ্রন্থকোষ’, ‘মধ্যমণিকায়’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। মানবতাবাদী ও আজীবন সেবাব্রতী এই মনীষী এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক ‘বিমলাচরণ লাহা স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। শ্রীলঙ্কায় তিনি ‘ত্রিপিটকার্য’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৪৮ সালের ২৩ মার্চ প্রয়াত হন পণ্ডিত বেণীমাধব বড়ুয়া।