গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বোয়ালখালীর ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। রোপা আমন, আমনের বীজতলা, আউশ, শরৎকালীন সবজি ও ফল বাগানসহ ১ হাজার ১৫ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। বৃষ্টির প্রভাব একটু কমে আসার পর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কিছু–কিছু এলাকা থেকে পানি সরে গেলেও নীচু এলাকার অধিকাংশ ক্ষেত– খামার, বীজতলা ও বাগান এখনো ডুবে আছে পানির নীচে। কৃষকেরা বলেছেন,বুক ভরা আশা নিয়ে গত মাসখানেক ধরে জমিতে বীজতলা তৈরি, বীজ ধান বপন, চারা পরিচর্যা, সার প্রয়োগ করে চারা রোপণের উপযুক্ত করে তুলেছি। মাত্র কয়েক দিনের বৃষ্টি মুহুর্তেই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সব স্বপ্ন। চরখিজিরপুর এলাকার কৃষক আলী মিয়া বলেন, এক একর জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছিলাম। ১৫ দিনের মাথায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সব। এখন নতুন করে চারা রোপণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু চারা কোত্তেকে সংগ্রহ করবো বুঝছিনা। আমুচিয়ার কৃষক জাফর বলেন, দুই একর জমিতে কয়েক জাতের পেঁপের আবাদ করেছি বৃষ্টিতে সব শেষ। এতে আমি প্রায় ৩ লাখ টকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১০১৫ হেক্টর জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৬০ হেক্টর ফসলি জমি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০৮ হেক্টর। এতে ১ হাজার ৮৮৫ জন কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ।এছাড়াও ৬৭৫ হেক্টর আমন ধানের জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫০ হেক্টর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২৫ হেক্টর। এতে ১ হাজার জন আমন চাষীর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৯০ লাখ টাকার। আমনের বীজ তলা নষ্ট হয়েছে ১১০ হেক্টর জমির। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৫০ হেক্টর জমির বীজতলা। ৪৮০ জন কৃষকের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২০ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজির ক্ষেত। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২০ হেক্টর জমির সবজি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬০ জন কৃষক। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৬৫ লাখ টাকা। নষ্ট হয়েছে ৩২ হেক্টর আউশ ক্ষেত। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১০ হেক্টর। এতে ১০৫ জন কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২২ লাখ টাকা। উপজেলার ২০ হেক্টর ফল বাগানের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হেক্টর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হেক্টর বাগান। এতে ৪০ জন কৃষকের ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, বিভিন্ন ফলের বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের স্বল্প সময়ের মধ্যে আবাদে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছেন। তারাঁ বন্যা পরবর্তী জমি আবাদে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সরকারিভাবে কোন সহায়তা পাওয়া গেলেই তা এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে পৌঁছানো হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।












