বোলারদের ম্যাচে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু দক্ষিণ আফ্রিকার

ক্রীড়া প্রতিবেদক | মঙ্গলবার , ৪ জুন, ২০২৪ at ১০:১১ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকাপের প্রথম বড় দুই দলের ম্যাচ। একদিকে বিশ্বকাপের আগে টানা তিন সিরিজ জেতা ইনফর্ম শ্রীলংকা আর অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইট ওয়াশ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা। তারপরও এই দলটির শক্তির কোন কমতি নেই। সঙ্গত কারণেই সবার প্রত্যাশা ছিল লড়াইটা জমজমাট হবে। কিন্তু হলো একেবারে পানসে। রান বন্যা দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হলেও এই ম্যাচে দেখা গেল রান খরা। বোলাররা ছড়ি ঘুরাল এই ম্যাচে। টিটোয়েন্টি ক্রিকেটের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে চার আর ছক্কার ফুলঝুড়ি। কিন্তু এই ম্যাচে তার বিপরীতটাই দেখল। যেখানে ব্যাটাররা চারছক্কা মারবেতো দূরে থাক, রানের জন্য মাথাখুঁড়ে মরতে হয়েছে।

নিউইয়র্কের ড্রপইন পিচে বল ব্যাটে আসছিল দেরিতে। যার সুযোগটা বোলাররা নিয়েছে দারুণভাবে। এমন কঠিন এক ম্যাচে শ্রীলংকাকে হারিয়ে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়টা ৬ উইকেটের। জয় পেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররাও টিটোয়েন্টি মেজাজের ব্যাট করতে করতে পারেনি। কারো স্ট্রাইক রেট একশ পার হয়নি। তারপরও সান্ত্বনা এটাই যে অন্তত জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে পারল দক্ষিণ আফ্রিকা।

টসে জিতে ব্যাট করতে নামা শ্রীলংকাকে প্রথম ধাক্কাটা দেন বার্টম্যান। ইনিংসের প্রথম বল থেকেই উইকেটে বাড়তি বাউন্স পাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা। আর সে সুযোগটা কাজে লাগাতে তিন ওভারের বেশি সময় নিলেন না প্রোটিয়া পেসাররা। বিশ্বকাপে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই উইকেটের দেখা পান পেসার বার্টম্যান। থার্ডম্যানে থাকা হাইনরিখ ক্লাসেনের ক্যাচে পরিণত করে সাজঘরে ফেরান পাথুম নিশাঙ্কাকে। তিনি করেন ৩ রান। দ্বিতীয় উইকেটে ১৮ রান যোগ করেন কুশল মেন্ডিস এবং কামিন্দু মেন্ডিস। ১৫ বলে ১১ রান করা কামিন্দু মেন্ডিসকে ফিরিয়ে মূলত ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেন প্রোটিয়া পেসার নরকিয়া। তার তোপের মুখে পড়ে লঙ্কান ব্যাটাররা ছিলেন কেবল আসাযাওয়ার মধ্যেই। উইকেটে সেট হওয়ার সুযোগই দেওয়া হয়নি কাউকে। তাইতো পুরো ইনিংসে বাউন্ডারি এসেছে মাত্র পাঁচটি। দুই অংকের ঘরে যেতে পেরেছেন কেবল তিনজন। তারা হলেন কুশল মেন্ডিস (১৯), কামিন্দু মেন্ডিস (১১) আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস (১৬)। এই তিনজনই ফিরেন নরকিয়ার শিকার হয়ে। নবম ওভারে পরপর দুই বলে জোড়া শিকার করেন স্পিনার কেশভ মহারাজ। তার শিকার অধিনায়ক হাসারাঙ্গা এবং সামারাবিক্রমা। দুজনই রানের খাতা খুলতে পারেননি। দলকে ৪০ রানে পৌঁছে দিয়ে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর করে ফিরেন কুশল মেন্ডিস। ৩০ বলে টিটোয়েন্টির বেমানান ১৯ রান করে আসেন মেন্ডিস। এরপর নরকিয়ার তোপের মুখে পড়ে একের পর এক সাজঘরে ফিরতে থাকে লংকান ব্যাটাররা। শেষ দিকে ১৬ বলে ১৬ রান করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। শেষ পর্যন্ত ৫ বল বাকি থাকতে ৭৭ রানে অল আউট হয় শ্রীলংকা। এটি টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে লংকানদের সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে ২০১৬ সালে ভারতের বিপক্ষে ৮২ রান ছিল এতদিন সর্বনিম্ন স্কোর। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে নরকিয়া ৪ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার কোন বোলারের সেরা বোলিং এটি। যদিও আগের সেরাটিও ছিল এই নরকিয়ারই। গত আসরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন নরকিয়া। কাগিসো রাবাদা এবং কেশভ মাহারাজ নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। আর বিশ্বকাপে অভিষেকে ৪ ওভার বল করে মাত্র ৯ রানে একটি উইকেট নিয়েছেন বার্টম্যান।

লক্ষ্যটা মাত্র ৭৮ রানের। সে রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হলো না দক্ষিণ আফ্রিকারও। ইনিংসের দ্বিতীয় এবং নিজের প্রথম ওভারেই রিজা হেনরিককে ফেরান নুয়ান তুষারা। অধিনায়ক এইডেন মার্করামও পারলেন না স্বল্প রানের লক্ষ্যটাকে শেষ করে আসতে। ১৪ বলে ১২ রান করে সানাকার বলে ফিরেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। কুইন্টন ডি ককও খেলছিলেন বেশ সতর্কতার সাথে। কিন্তু তিনিও পারলেন না ম্যাচ জিতিয়ে ফিরতে। একেবারে অযথা হাসারাঙ্গার হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ডি কক। তিনিও খেলেন টিটোয়েন্টির সাথে বেমানান ২৭ বলে ২০ রানের ইনিংস। মেরেছেন একটি মাত্র ছক্কা। এক ওভার পর ফিরলেন ট্রিসটান স্টাভ। হাসারাঙ্গার বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। তার ব্যাটিং আরো ধীর গতির। ২৮ বলে ১৩ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ৫০ এরও কম। এরপর হেনরিক ক্লাসেন এবং ডেভিড মিলার আর কোন সুযোগ দেননি লংকান বোলাররদের। ২২ বল হাতে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে এই দুই প্রোটিয়া ব্যাটার। ক্লাসেন ২২ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন প্রোটিয়া পেসার নরকিয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীমান্তে বিজিবির সঙ্গে গোলাগুলি, চোরাকারবারি নিহতের খবর
পরবর্তী নিবন্ধশেখ রাসেল পার্কের দুটি হরিণ মেরে ফেলল বন্য কুকুর