বিধি ভঙ্গ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য মেঘনা পেট্রোলিয়ামকে চিঠি দিয়েছে অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। গত ২৪ জানুয়ারি বিপিসি সচিব মো. লাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের কোম্পানি সচিবকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিপিসি সচিব স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বিগত ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের পরিচালক পর্ষদের ৬১৯তম সভার বিবিধ-০১/২০২১নং সিদ্ধান্ত বাতিলের অনুরোধ করা হয়। পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত করে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর ছাইফুল্লাহ আল খালেদকে তার চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পূর্বে সর্বশেষ আহরিত শেষ বেতনকে ভিত্তি ধরে চাকরি (বেতন ভাতাদি) আদেশ ২০১৪ অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধান অনুসরণে বেতন ভাতাদি নির্ধারণ পূর্বক কোম্পানি প্রদত্ত অন্যান্য প্রচলিত সুবিধাদিসহ মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ২৫ জানুয়ারি তারিখ অথবা যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাব পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হলো। সিদ্ধান্ত কোম্পানি সচিব সরাসরি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য প্রেরণ করবেন। পত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশনের ১৩১(ক) ধারা ‘দ্যা ম্যানেজিং ডিরেক্টর অব দ্যা কোম্পানি শেল বি এপয়েন্টেড বাই দ্যা কর্পোরেশন’ উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আইন, ২০১৬-এর ১১(ঢ)তে ‘বিপিসি’র অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধান নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্পোরেশনকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে’ বলেও উল্লেখ করা হয়। পত্রের শেষাংশে বলা হয়, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এর পরিচালনা পর্ষদের ৬১৯তম সভার বিবিধ-০১/২০২১নং সিদ্ধান্ত এমপিএলের মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস্ অব এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আইন, ২০১৬ এর লঙ্ঘন এবং পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক এ ধরণের এখতিয়ার বহির্ভূত সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে খারাপ নজির হিসেবে আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বিধায় উক্ত সিদ্ধান্ত বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টি বিপিসিকে পুনরায় অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জানা যায়, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর ছাইফুল্লাহ আল খালেদকে ২০১৬ সালের জুন মাসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুই বছরের জন্য মেয়াদ বর্ধিত করে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ২৩ জানুয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি মেঘনা পেট্রোলিয়ামের বোর্ড সভায় তাকে পুনরায় আরও এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের পর্ষদ সভায় গৃহীত এ সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ না হওয়ায় অভিভাবক প্রতিষ্ঠানের সাথে রশি টানাটানি শুরু হয়। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিপিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন সরকারের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক।
মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পর্ষদ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির সচিব (সরকারের উপসচিব) মো. লাল হোসেন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এখন সরকারি কর্মকর্তাদের সার্ভিস রুলস আছে। আমি গণমাধ্যমে কোন কথা বলতে পারি না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসির এক কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কোম্পানি সচিব রেজা মো. রিয়াজকে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে। তিনি (কোম্পানি সচিব) বিপিসির চিঠির বিষয়টি পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করবেন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করার পদক্ষেপ নেবেন। এরপর বিষয়টি বিপিসিকে পুনরায় অবহিত করার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।