বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফি আবার নিজেদের করে নিল অস্ট্রেলিয়া। পাশাপাশি নিশ্চিত করে ফেলল টানা দ্বিতীয়বার আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলাও। বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে সবশেষ ২০১৪–১৫ সিরিজে ২–০ ব্যবধানে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর ভারতে দুটি ও অস্ট্রেলিয়ায় দুটি, টানা চারটি সিরিজ জিতেছিল ভারত। অবশেষে দেশের মাঠে ট্রফি পুনরুদ্ধার করলেন কামিন্সরা। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে গতকাল রোববার ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। ৬ উইকেটে ১৪১ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা ভারত আর যোগ করতে পারে কেবল ১৬ রান। আগের দিনের চারটির সঙ্গে আরও দুটি উইকেট যোগ করেন স্কট বোল্যান্ড। ইনিংসে ছয় উইকেট নিয়ে প্রথমবার ম্যাচে ১০ উইকেটের স্বাদ পান তিনি। অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬২। ৫৯ রানে ৩ উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত জিতে যায় তারা খুব বেশি বিপাকে না পড়েই।
ম্যাচের তৃতীয় দিন সকালে ভারতের লিড বাড়ানোর আশা নিয়ে ক্রিজে নামেন রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দার। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান পেসের সামনে টিকতে পারেননি তারা। দিনের তৃতীয় ওভারে প্যাট কামিন্সকে একটি বাউন্ডারি মারার এক বল পরে ১৩ রান করা জাদেজা ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। এক ওভার পর ১২ রান করা সুন্দারকেও বোল্ড করে দেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। এরপর লেজে ছোবল দেন বোল্যান্ড। তিন বলের মধ্যেই শেষ দুই উইকেট নিয়ে ভারতের ইনিংস শেষ করে দেন তিনি। মোহাম্মদ সিরাজকে ফিরিয়ে ইনিংসে পাঁচ উইকেট স্পর্শ করেন তিনি টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার। বুমরাহকে বোল্ড করে পূর্ণ করেন ম্যাচে ১০ উইকেট। অথচ জশ হেইজেলউড ফিট থাকলে তিনি খেলার সুযোগই পেতেন না। এক রানের মধ্যে শেষ তিন উইকেট হারায় ভারত। ম্যাচে ৭৬ রানে ১০ উইকেট বোল্যান্ডের। সিডনিতে সবশেষ কোনো অস্ট্রেলিয়ান পেসারের ১০ উইকেট পাওয়ার নজির ২৫ বছর আগের। ভারতের বিপক্ষেই ১০ উইকেট নিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা।
১৬২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ১৭ বলে ২২ করে ফিরেন কনস্টাস। তাকে ফেরান প্রাসিধ কৃঞ্চা। এই প্রাসিধের হাত ধরেই আরও দুটি উইকেট তুলে নেয় ভারত দ্রুত। আগের বেশ কবারের মতো আরও একবার গ্লাইড করে গালিতে ধরা পড়েন মার্নাস লাবুশেন। বাড়তি লাফানো দুর্দান্ত ডেলিভারি সামলাতে পারেননি স্টিভেন স্মিথ। গালিতে ডাইভিং ক্যাচ নেন ইয়াসাসভি জয়সওয়াল। ১০ হাজার টেস্ট রান থেকে ৩৮ রান দূরে এই টেস্ট শুরু করেছিলেন স্মিথ। প্রথম ইনিংসে ৩৩ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আউট হলেন ৪ রানে। ১০ হাজারের সঙ্গে দূরত্ব রয়ে গেল ১ রানের। মাইলফলক পূরণ করতে তাই শ্রীলঙ্কা সিরিজ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তাকে। ৩ উইকেটে ৭১ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। ওপেন করতে নেমে তখনও টিকে উসমান খাজা। লাঞ্চের পর একটু আগ্রাসনের পথ বেছে নেন খাজা। কাট আর ড্রাইভে দ্রুত আদায় করেন চারটি বাউন্ডারি। অস্ট্রেলিয়া পেরিয়ে যায় একশ। আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টাতেই উইকেট হারান খাজা। সিরাজের বলে পুল করতে গিয়ে আউট হন তিনি ৪১ রানে। ৩৬ টেস্ট খেলতে নামা সিরাজের এটি শততম উইকেট। টেস্ট উইকেটের সেঞ্চুরি পূর্ণ করা দশম ভারতীয় পেসার তিনি।
ভারতের আশা আবার জেগে ওঠে ওই উইকেটে। কিন্তু ট্রাভিস হেড ও বাউ ওয়েবস্টার আর জমে উঠতে দেননি লড়াই। দাপুটে ব্যাটিংয়ে দুজন দ্রুতই শেষ করে দেন ম্যাচ। বিশেষ করে অভিষিক্ত ওয়েবস্টার দেখিয়ে দেন তার সামর্থ্যের ঝলক। ৩৮ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন হেড। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা ওয়েবস্টার এবার অপরাজিত থাকেন ৩৪ বলে ৩৯ রান করে। জুটিতে ৫৮ রান আসে ৫৩ বলে। ২৭ ওভারে ১৬২ রান তুলে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছেন স্কট বোল্যান্ড। আর ম্যান অব দ্যা সিরিজ হয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ।
