বোরো ধানে ভালো ফলন

চকরিয়ায় রাবার ড্যামে আটকানো পানির সুফল

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর দুই পয়েন্টে রাবার ড্যামে (ব্যারেজ) আটকানো মিঠা পানি এবং যথাসময়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি কৃষিবিভাগের সার্বক্ষণিক মনিটরিংসহ নানা তৎপরতায় উপজেলায় এবারও বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। বর্তমানে দিগন্তজোড়া মাঠে মাঠে সোনালী ফসল বোরো ধান কাটার ধুম পড়েছে। করোনার এই মহামারীতে বোরো ধানের ভালো উৎপাদন হওয়ায় উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার প্রায় ২২ হাজার কৃষক পরিবারে হাসি ফুটেছে।
কৃষকদের আশা, প্রতিবছরের মতো এবারও বোরো ধানের বাম্পার উৎপাদনে কৃষক পরিবারগুলো আর্থিকভাবে সচ্ছল হবে। তাদের মতে, এবারও উপজেলায় অন্তত ২০০ কোটি টাকার খাদ্যশষ্য উৎপাদন ছাড়িয়ে যাবে। উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও প্রান্তিক এসব কৃষকের দেওয়া তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা আরো জানান, ধান কাটা নিয়ে শ্রমিক সংকটের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না কৃষকদের। কারণ ইতোমধ্যে চকরিয়ার কৃষকদের ধান কাটার জন্য ভর্তুকিতে দুইটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্র প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ধান কাটার জন্য এই উপজেলায় কৃষকদের হাতে আরও ২২টি রিপার (ছোট যন্ত্র) দেওয়া হয়েছে। এতে করোনাকালীন সময়ে বোরো ধান কাটার সময় শ্রমিক নির্ভরতা ও করোনা ঝুঁকি কমে যাবে। উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা রাজীব দাশ জানান, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় এবার বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছিল ১৭ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে। তন্মধ্যে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড প্রজাতির হিরা, সাথী, টিয়া, আফতাব, ইস্পাহানি, তেজগোল্ড এবং বাকী হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ব্রি-ধান ২৮, ৫৮, ৭৪, ৭৫, ৮৬, ৮৮ এবং স্থানীয় প্রজাতির আরো বিভিন্ন ধানের চাষ করা হয়।
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, কৃষি বিভাগের সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকেরা জমিতে পরিমাণ মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং নিবিড় পরিচর্যায় এবারও বোরো ধানের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। এতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং খাদ্য ঘাটতি দূর হবে এই উপজেলায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সময়মতো ড্যামের রাবার ফুলিয়ে মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানি আটকানো, উপকূলীয় এলাকার স্লুইচ গেটগুলোর কপাট বন্ধ করা, পোকার আক্রমণ রোধে পার্চিং পদ্ধতি, কীটনাশক প্রয়োগ করে রোগ প্রতিরোধ করায় এবারও বোরো ধানের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে এখানে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে মাঠে মাঠে বোরো ধান কেটে ফসল ঘরে তোলার কাজে ব্যস্তসময় পার করছেন। করোনাকালীন যাতে শ্রমিক সংকট বা নির্ভরতা না থাকে সেজন্য দুইটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্র এবং আরও ২২টি রিপার (ছোট যন্ত্র) ধান কাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব যন্ত্র সরকারিভাবে ভর্তুকি দিয়ে কৃষককে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, চকরিয়া উপজেলার কৃষক তথা সাড়ে ৬ লাখ মানুষের জন্য বিরাট আশীর্বাদ হচ্ছে মাতামুহুরী নদী। বর্ষাকালে এই নদী রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীর মিঠাপানি দিয়ে এখানকার কৃষকেরা ধানসহ বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে আসছে। প্রতিবারের মতো এবারও সার্বিক তদারকির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেওয়ায় বোরো ধানের বাম্পার উৎপাদনে সফলতা এসেছে। এতে করে চকরিয়া উপজেলা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হবে।
চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের সুয়াজিন্নাহ এলাকার ৩০ কানি জমিতে হাইব্রিড প্রজাতির সাথী ধানের চাষ করেছেন কুমার বিশ্বজিত দাশ। তিনি বলেন, অতীতের চেয়ে এবার বোরো ধানের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে আমার জমিতে। সেই হিসেবে প্রতি কানি জমিতে সর্বোচ্চ দেড় টন পর্যন্ত ধানের ফলন হয়েছে।
উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাং এলাকার কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, আমি এবার ১৫ কানি জমিতে উচ্চ ফলনশীল প্রজাতির ব্রি-৫৮ ধানের চাষ করেছি। প্রতি কানি জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ১২০ থেকে ১২৫ আড়ি। যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনায় ফের পেশা পরিবর্তন
পরবর্তী নিবন্ধআশুলিয়ায় হাত বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার নিখোঁজ সাংবাদিক সিয়াম