বোধবুদ্ধিহীনতা নয় দায়িত্বশীলতাই হোক আমাদের অর্জন

রাজিউর রহমান বিতান | মঙ্গলবার , ৬ আগস্ট, ২০২৪ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

মাঝেমাঝে মনে হয় এই অভাগা দেশে বেঁচে থাকাটাই জীবনের সবচেয়ে বড় শাস্তি, কৃতকর্মের বড় প্রায়শ্চিত্ত….!

মাত্র নয় মাসে অর্জিত অমূল্য স্বাধীনতা প্রাপ্তির যোগ্য আমরা নই। যদি হতাম তাহলে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারতে পারতাম কি? জাতীয় সম্পদের ধ্বংসলীলায় মেতে উঠার আগে একবারও ভাবি না এসব কার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে, কার টাকায় গড়া হয়েছে, এই জিঘাংসার পরিণতি কী হতে পারে? আসলে আমরা নিজেরাই নিজেদের ভোগান্তির জন্য দায়ী, অনুতাপের কারণ। বোধশূন্য আত্মঘাতী জাতিকে এখনো দায়িত্বশীল করে তুলতে পারেনি বৃটিশদের ২০০ বছরের গোলামির জিঞ্জির এবং পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন আর অপমানঅসম্মানের করুণ ইতিহাস। অতীতের শিক্ষা আদৌ কি পারবে কখনো নির্বোধদের মানুষ করে তুলতে? আমাদের বড় অপারগতা ও ব্যর্থতা হলো আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই না, জীবনের পাঠ গ্রহণ করি না। এমনিতেই আধুনিক বিশ্ব থেকে শিক্ষাসভ্যতাসমাজব্যবস্থা, উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নিরিখে অনেক পিছিয়ে থাকা জাতি আমরা!

তার উপর করোনা পরবর্তী মন্দাগ্রস্ত বিশ্ব বাণিজ্যের চাপ, বৈশ্বিক দুর্মূল্য, রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধসহ অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোণঠাসা দেশের অগ্রসরমান দুর্বল অর্থনীতিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা যখন চলমান, সেই মূহূর্তে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে নিজের দেশের প্রতিপক্ষ সেজে নিজেরাই শত্রুপক্ষ হওয়া বড়ই মর্মযাতনার, দুর্ভাগ্যের ও ক্ষোভের কারণ নিঃসন্দেহে।

লক্ষ লক্ষ খেটে খাওয়া মানুষকে এভাবে ঘরবন্দী হতে বাধ্য করা, রুজিরোজগার বঞ্চিত করে দেওয়া, আমার/আপনার ট্যাঙের টাকায় গড়ে তোলা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় চালানো বর্বরোচিত, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কখনোই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না! কোন সুস্থবোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এসব মেনে নিতে পারে না! এতে কারা লাভবান হলো আর কারা ক্ষতিগ্রস্ত হলো ভেবে দেখেছে কী অপরিণামদর্শী, বিবেকবুদ্ধিশূন্য আগুন সন্ত্রাস, দানবীয় তাণ্ডবের হুকুমদাতা, সম্পৃক্ত দুষ্কৃতকারী, রাষ্ট্রদ্রোহি, গণশত্রুরা? ধিক্কার জানাই স্বাধীন দেশে চালানো এমন ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডের! কঠিন সময়েও দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারা যেকোন শিক্ষিত, সচেতন, সভ্য নাগরিক এবং দায়িত্বশীল কতৃপক্ষের জন্য গৌরবের ও দৃষ্টান্তমূলক। এমনকি সকলের জন্য অনুকরণীয়। হঠকারিতা এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতার জন্য যখন অমূল্য জীবন ও সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায় তখন সেটা শাস্তিযোগ্য চরম অপরাধের পর্যায়ে চলে যায়! এসবের জন্য অসংখ্য পরিবার চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে পড়েছে! সুবিধাবাদীরা সময় থাকতে ভয়ংকর পরিণতি বুঝতে পারে না! চরম বিপর্যয় ঘটে যাওয়ার পরও অনুশোচনার বদলে আবারও আক্রোশপ্রসূত অসুস্থ মনোভাব পোষণ করে হঠকারিতার আশ্রয়ে সান্তনা খুঁজে! কখনো আবার বিভ্রান্ত, বিকারগ্রস্ত হয়ে আত্মঘাতীপ্রবণ হওয়ার মানসিকতা লালন করে! এদের আশয়প্রশ্রয়পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানকারীরা গর্হিত অপরাধী, নিন্দিত, ধিকৃত হয়ে থাকবে ইতিহাসে! আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আমাদেরকে সন্ত্রাসপ্রবণ, অনিরাপদ, আত্মঘাতী জাতি হিসেবে চিহ্নিত করছে! যা আমাদের জন্য ভীষণ লজ্জার ও দুর্ভাগ্যের! আমাদের সকল অর্জন এভাবে কালিমালিপ্ত হতে পারে না! আমরা এটা মেনে নিতে পারি না!

আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এভাবে লজ্জিত, অপমানিত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হতে পারি না কোনও বিবেচনায়। নিশ্চয়ই সুন্দর দিন ফিরে আসবে, শুভবুদ্ধির পরিচয় দিবে সংশ্লিষ্ট সবাই! একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, দারিদ্রমুক্ত, বেকারত্বমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত ও মর্যাদাশীল জাতি হওয়ার স্বপ্ন যেন আমাদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে না উঠে সেই আকাঙ্খা নিশ্চয়ই অন্যায় নয় আমাদের! এর অন্যথা মানে, ভালোমন্দ কৃতকর্মের সবকিছুই বুমেরাং হয়ে আমাদের ললাটলিখন হতে পারে! অর্থাৎ ভালোর প্রতিফল শুভ আর মন্দের প্রতিফল অশুভ! সবচেয়ে কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য কথা হলো, বোধবুদ্ধিহীনতা নয় দায়িত্বশীলতাই হোক আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বন্দ্বময় মানব
পরবর্তী নিবন্ধআজাদীবাজার সড়কটি মেরামত করা হোক