ঘুম ভেঙে চোখ খুলতেই নজরে এলো বুকের ওপর ভাঁজ হয়ে থাকা ক‘টা আঙুল! লক্ষ্য করলাম আমার সমস্ত শরীর নিজেকে পেলেও হাতের আঙুলে নিজেকে পাচ্ছি না। অর্থাৎ হাতের আঙুল নাগাদ আমার অনুভূতি পৌঁছোতে ব্যর্থ হচ্ছে!এক নজরে পায়ের পাতা থেকে সমস্ত শরীর অবধি যতটা নজরে যায় ততটায় শনাক্ত করে নিলাম নিজেকে। লক্ষ্য করলাম– আমার ভাষা হাতের আঙুল প্রকাশ করতে ব্যর্থ। অথবা আমি ব্যর্থ আমার নিজ সত্তার আবদার রক্ষার্থে। ভয় পেলাম! আমার হাত নয়? নড়াচড়া করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম আঙুলগুলো নিজস্বতা তৈরী করেছে অর্থাৎ আমার মস্তিষ্ক তাকে আর পরিচালনা করতে পারছে না! আমার চোখ, নাকের ডগা, ঠোঁট আমার চেতনামতেই চেষ্টা অব্যাহত রাখলো। তবে, পাশ ফিরে শোবার বা হাতটা অন্য হাত দিয়ে সরিয়ে নেবার সাহস পাচ্ছিলাম না, পাছে আঙুলগুলো বুকের মাংস খামচে ধরে! নিজের সত্তার সাথে নিজের এমন অবিচার! মানতে চাইলো না এই আঙুলে আদরে তোলা চোখের কাজল, যত্নের ফুলদানী আর দেয়ালঘড়িটি! এই পর্যায়ে চিহ্নিত করলাম চোখ! না, নিজের চোখ নয়! সবক‘টা আঙুলের ভাঁজে ভাঁজে যেনো এক একটি চোখ! এক একটি নজর! যেনো আমাকে পড়ে নিচ্ছে। নিজের হাতটাকে বড্ড অচেনা লাগলো! শরীরে জমে থাকা ঘামের ধর্ম গড়িয়ে পড়া না হলে এতক্ষণে ঘামের ঢিবি তৈরী করে নিতো এই মুহূর্তের উত্তেজনা! আমি বড় বড় দম নিতে শুরু করলাম। আমার নিঃশ্বাসের সাথে পায়ের আঙুল থেকে কপালের ওপর জমে থাকা ঘাম নড়েচড়ে উঠছে! কিন্তু হাতের আঙুল নড়ছে না। চারপাশটা দেখে নিলাম। আমি ছাড়া এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবকিছু অস্পষ্ট। আমি দম নিচ্ছি। কিন্তু হাতখানা নিজের অস্থিতেই অটল! নিজের শরীরের খুব অচেনা আচরণে আমি হতভম্ব! অথচ এই আঙুলই যত্নে আগলে রাখে আমার আদরের রঙ–তুলি, আমার ক্যানভাস! হায় আমার অস্তিত্ব! আমি দম নিচ্ছি! আমার শরীরের ভেতর লক্ষ কোটি অগ্নিকুণ্ড প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ গতিতে ওঠানামা করছে কিন্তু আমার হাত–নিথর! নিজেকে যেভাবে চাইছি সেভাবে পাচ্ছি না! ক্ষণে ক্ষণে নিজের শরীরের অভিযোগ পৌঁছে দিচ্ছি নিজের মস্তিকের কাছে! আমি দম নিচ্ছি। বুঝতে পারলাম–তাতে সুবিধে কিছু করে উঠতে পারছি না। আমি দম নিয়েই চলেছি। অনেকটা পরে লক্ষ্য করলাম হাতখানা তার আঙুলগুলো মেলে ধরেছে! না, এই আঙুলে কোনো ক্ষোভ নেই, আমাকে আঘাত করবার মতো প্রেমহীনও নয়! তবে, মনে হলো– অন্য হাতটির প্রতীক্ষায় সে! আমি সুখ অনুভব করলাম। এই সুখ আগে কখনো অনুভব করিনি। যদিও নিজের শরীরে অন্য অস্তিত্ব–তবে, আপন এবং আপনার। তারও অনেকটা পরে আবিষ্কার করলাম হাতটি আসলে আমার নয়, বিবেক! তারপর নিজেকে পেলাম আরও একবার, আরও কিছুটা অন্যরকম। লেখক : সম্পাদক, প্রবোধ।