বৈষম্যের অভিযোগ, পুনর্মূল্যায়নের আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রে ২৫ জনের চিঠি

চবি ছাত্রদলের নতুন কমিটি

শামীম হোসাইন, চবি | শুক্রবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ at ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ ৯ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গেল বুধবার রাত ১০টায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ৪২০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়।

এর আগে ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট মাত্র ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি দেওয়া হয়েছিল। এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা থাকলেও সেটা বাস্তবায়নের মুখ দেখাতে পারেনি শাখা ছাত্রদল। অবশেষে ২৫ মাস পর চবি শাখা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলো।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগের আংশিক কমিটিতে সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মামুন উর রশিদ মামুন (চাকসু নির্বাচনের আগে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত), সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় দায়িত্বে ছিলেন। তবে এদের অধিকাংশই বর্তমানে নিয়মিত শিক্ষার্থী নন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে নবঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সংসদে কমিটি পুনর্মূল্যায়ন ও বর্ধিত করার আবেদন জানিয়েছে ছাত্রদলের ২৫ জন সদস্য। এর মধ্যে চাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিত ১৩ জন এবং কমিটিতে পদ পাওয়া ১২ জন এ দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সেক্রেটারি বরাবর এ আবেদন জানানো হয়।

লিখিত আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে তারা দীর্ঘদিন চবি ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তা সত্ত্বেও নতুন ঘোষিত ৪২০ সদস্যের কমিটিতে ‘গ্রুপিং কালচারের’ পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে সিনিয়র ও পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে অনেক নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের হয়ে বিভিন্ন হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ১৩ জনের মধ্যে ১০ জনকে কমিটিতে স্থান দিলেও তাদের উপযুক্ত পদ দেওয়া হয়নি এবং বাকি ৩ জনকে কমিটিতে রাখা হয়নি।

আবেদনপত্রে আরও বলা হয়, অনেক সিনিয়র নেতাকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, অথচ এমন ব্যক্তিরাও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন যারা ছাত্রদলের কোনো কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সক্রিয় নন। আরও অভিযোগ করা হয়, ২২২৩, ২৩২৪ এবং ২৪২৫ সেশনের জুনিয়রদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হলেও বহু সিনিয়রকে মূল্যায়ন করা হয়নি।

এসময় কেন্দ্রের নিকট দুই দফা দাবি উত্থাপন করে বলা হয়সিনিয়র এবং চাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে এবং কমিটি বর্ধিত করে বাদ পড়া পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দাবি বিবেচনা না করা হলে চাকসুতে নির্বাচিত ১৩ জনসহ মোট ৩৫ জন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চাকসু নির্বাচনে মাস্টারদা সূর্যসেন হল সংসদ থেকে ভিপি নির্বাচিত হওয়া তাজীম ইবনে হাবিব বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে সূর্যসেন হলে আমাদের সাথে প্রায় ২২ জনের মতো ছাত্রদল কর্মী সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। এর মধ্যে মাত্র ৩ জনকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া অনেক ত্যাগী নেতাদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে। এজন্য সিনিয়রদের পরামর্শে আমরা একটি চিঠি কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছি। আশা করি কেন্দ্র বিষয়টি দেখবে।

এ বিষয়ে জানতে গত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি। তবে চবি ছাত্রদলের সিনিয়র নেতা (সহসভাপতি) মো. হিশাম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চবি শাখা ছাত্রদল হচ্ছে একটা বৃহৎ সংগঠন। এখানে চাইলে তো আর সবাইকে পদ দেওয়া যায় না। নতুন কমিটিতে ৪২০ জনকে পদ দেওয়া হয়েছে। অথচ আরও ৬ হাজারের অধিক যোগ্যতা সম্পূর্ণ নেতাকর্মী আছে যাদেরকে পদ দেওয়া হয়নি। আমি নিজেও দীর্ঘদিন পদপদবি ছাড়া ছিলাম। তবে সামনে আমাদের হল কমিটি, ফ্যাকাল্টি কমিটি দেওয়া হবে। এখন যাদেরকে পদ দেওয়া হয়নি সেখানে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সভাপতি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মহসীন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০০৮০৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র নন। সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান একই বিভাগের ২০০৯১০ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি ৫ আগস্ট পরবর্তী বিশেষ বিবেচনায় অর্থনীতি বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন।

সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মামুনউররশিদ মামুন অর্থনীতি বিভাগের ২০০৯১০ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনিও ৫ আগস্ট পরবর্তী বিশেষ বিবেচনায় মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন। সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিন ইতিহাস বিভাগের ২০১১১২ সেশনের শিক্ষার্থী। সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় দর্শন বিভাগের ২০১৫১৬ সেশনের শিক্ষার্থী, তিনিও ৫ আগস্টের পর মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন।

নতুন ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এই ৫ জনকে রেখে আরও ৪১৫ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের অচলাবস্থা কাটিয়ে চবি ছাত্রদল নতুন নেতৃত্ব পেলেও নেতৃত্বে ‘অছাত্র’ থাকা নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, আমি ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী নিয়মিতভাবে পড়াশোনা চালানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ছাত্রলীগ ক্যাডার ও প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। দলের দুঃসময়ে আমি সামনের সারিতে ছিলাম, সেই কারণেই দল আমাকে সভাপতি করেছে।

সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, জুলাই আন্দোলনের আগে থেকেই আমি রাজপথে ছিলাম। অনার্স শেষ করেছি। কিন্তু ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের কারণে মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারিনি। ৫ আগস্ট পরবর্তী নিয়ম মেনে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি।

সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ মামুনউররশিদ মামুন বলেন, ৫ আগস্টের আগে পড়াশোনা চালাতে পারিনি। তবে গত মাসে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি। দল আমাকে চাকসু নির্বাচনের আগে বহিষ্কার করেছে, কিন্তু আমি দলের বাইরের কেউ নই। চাইলে আমি আবার কাজ করতে প্রস্তুত।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর চবি শাখা ছাত্রদলের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দুই বছরের জন্য করা হলেও সেটি বিলুপ্ত করা হয় ৬ বছর পর ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধথানা ছাত্রদলের চার নেতার পদ স্থগিত
পরবর্তী নিবন্ধকোতোয়ালী থানা ছাত্রদলের আহ্বায়কসহ আরো তিন থানার যুগ্ম আহ্বায়কের পদ স্থগিত