সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনে এই কমিটি ঘোষণা করেন আরেক সমম্বয়ক সারজিস আলম। কমিটিতে সদস্যসচিব হিসেবে রাখা হয়েছে আরিফ সোহেলকে। মুখ্য সংগঠক হিসেবে থাকছেন আব্দুল হান্নান মাসুদ, মুখপাত্র করা হয়েছে উমামা ফাতেমাকে।
এই কমিটি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের সংগঠিত করতে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় ১৫৮ জন সমন্বয়কের অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা জেলায় ছাত্র আন্দোলনের কাঠামো দাঁড় করানো যায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তাই বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের একটি কাঠামো প্রয়োজন। এই কমিটি কোনো রাজনৈতিক দলে রূপ নেবে না বলে জানিয়েছেন সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর সে ব্যানার রাজনৈতিক সংগঠনের রূপ নিয়েছিল। কিন্তু এই ব্যানার কোনো রাজনৈতিক দলে রূপ নেবে না। পূর্বের মতো সকল মতের মানুষের অংশগ্রহণে এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জাতীয় প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, আমরা ১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি প্লাটফর্ম করেছি। আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল, কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষ হওয়ার পর এই ব্যানারে আর কোনো কার্যক্রম হবে না। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুধু কোটা সংস্কার আন্দোলনে সীমাবদ্ধ ছিল না। এই ব্যানার ফ্যাসিবাদের পতন ত্বরান্বিত করে। তাই আমরা মনে করছি এই ব্যানারের কার্যক্রম এখনই স্থগিত শেষ হওয়ার সুযোগ নেই। রাষ্ট্র সংস্কারের দায়দায়িত্ব এই ব্যানারের উপর বর্তায়। এছাড়া ৫ আগস্টের পর একদল সমন্বয়ক পরিচয়ে অপকর্ম করছে। সেক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি করলে তাদেরকে আইনের আওতায় বা সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে। এই কমিটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ জনের কমিটিও পুনর্গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। কমিটিতে দেশব্যাপী জেঞ্জি ও তরুণরা স্থান পাবে বলেও জানান তিনি।
কমিটি ঘোষণার পর বক্তব্যে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমার প্রথম কাজ হবে যারা বাংলাদেশকে ধারণ করে ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছিল এবং এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে সংগঠিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্থান নিশ্চিত করা।
দ্বিতীয়ত, সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফ্যাসিবাদী শক্তি নানা ফর্মে উত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছে। মুজিববাদী শক্তি যে ফর্মে আসুক না কেন সেটিকে এই বাংলার মাটি থেকে স্থায়ী উৎপাটন করার জন্য কাজ করব।
তৃতীয়ত, আমাদের এক দফার অঙ্গীকার ছিল ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার কাজ করব।
সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, বাংলাদেশে আনাচে–কানাচে, পাড়া–মহল্লায়, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের যারা ছিলেন তাদের সংগঠিত করার কাজ করব। গণঅভ্যুত্থানের অন্তর্ভুক্তিমূলক আদর্শ, সংগঠনটির সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের চেষ্টা করব।
আহ্বায়ক কমিটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, অভ্যুত্থানে নারীদের যে ভূমিকা ছিল, তা দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। তারা রাজপথে নামে, সরকারের পতন ঘটায়, এরপর আবার ঘরে ফিরে যায়। তবে এবার নারীরা সিদ্ধান্তগ্রহণকারী হিসেবে অংশ নেবে। সে প্রতিনিধিত্ব করতেই আমি কমিটিতে রয়েছি।