বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ইলম (জ্ঞান) চর্চা

শেখ বিবি কাউছার | সোমবার , ২৪ মার্চ, ২০২৫ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

ইলম আরবি শব্দ, যার অর্থ জ্ঞান। কোন বিষয়ে সচেতন হওয়া হচ্ছে জ্ঞান। আমরা অনেক সময় তথ্য ও জ্ঞানকে এক করে ফেলি। আমাদের মনে রাখা দরকার, তথ্য আহরণ ও জ্ঞান আহরণ এক বিষয় নয়। যেমন , আমার একটি কম্পিউটার আছেএটা একটি তথ্য। কিন্তু কম্পিউটারটি কীভাবে, কেন এবং কী কী কাজে লাগে কীভাবে মানুষের উপকার বা অপকার করে এগুলো জানা হলো জ্ঞান। যার কারণে জ্ঞান মানুষের অপরিহার্য সম্পদ। আবার জ্ঞান যখন পরিপক্ব হয় তখন তাকে প্রজ্ঞা বলে। পবিত্র আল কোরানে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দুটো শব্দের ব্যবহার রয়েছে। জ্ঞান ও প্রজ্ঞা বিষয়ে বিভিন্ন হাদিসও রয়েছে। হাদিস শরিফ সুনানদারেমীতে আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) বলেন, “প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি কখনো আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির বিষয়ে কাউকে নিরাশ করেন না।” অন্য এক হাদিস শরিফে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘সত্যজ্ঞানীর অনুপস্থিতিতে সাধারণ মানুষ মূর্খদেরই ইমাম বা নেতা বানিয়ে তাদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা চাইবে। আর এই মূর্খরা জ্ঞান ছাড়াই ফতোয়া দিতে শুরু করবে। তারা নিজেরা উচ্ছন্নে যাবে, সাধারণ মানুষকেও উচ্ছন্নে যাওয়ার পথে নেতৃত্ব দেবে।’ জ্ঞান অর্জন দু’ধরনের হতে পারে। যেমন এক. আবশ্যিক জ্ঞান, দুই. ঐচ্ছিক জ্ঞান। এখানে আবশ্যিক জ্ঞানকে দু’ভাবে চিন্তা করতে পারেন। ধর্মসংক্রান্ত আবশ্যিক জ্ঞান ও উপার্জন সংক্রান্ত আবশ্যিক জ্ঞান। ধর্ম সংক্রান্ত জ্ঞানের একমাত্র উৎস হলেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তাইতো যুগে যুগে নবী রাসূল, অলি আউলিয়াগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের আলোকে বার্তাবাহকের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। যে ধর্ম জ্ঞান থাকলে ধর্ম সম্পর্কে কিংবা ইসলাম সম্পর্কে কেউ আমাদের বিপথে পরিচালিত করতে পারবে না। আবার জীবনে চলার জন্য উপার্জনসংক্রান্ত জ্ঞানচর্চা করাও ফরজ। তাহলে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষের দুটো জ্ঞানই প্রয়োজন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই’তো বলেছেন, ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন পর্যন্ত যাও। ইসলামসহ পৃথিবীর সকল ধর্মই জ্ঞানকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) মেশকাত শরীফে বলেন, ‘রাতে একঘণ্টা জ্ঞানচর্চা বা ধ্যান সারারাত ইবাদতের চেয়ে উত্তম।’ সুফিরা সে জ্ঞানই অর্জনে রত থাকেন যে জ্ঞান আল্লাহকে পেতে, আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করে। সুফিরা এক অর্থে ইলমের তথা জ্ঞানের সন্ধানী। জ্ঞানহীন সাধককে বাবা নিজাম উদ্দিন আউলিয়া ‘শয়তানের ভাঁড়’ বলে কারণ জ্ঞানই না হলে স্রষ্টার রহস্য জানা যায় না। সক্রেটিস বলেছেন, ‘জ্ঞানই পুণ্য, পুণ্যই জ্ঞান।’ বর্তমান সময়ে মুসলমানরা পশ্চিমাদের চেয়ে তুলনামূলক পিছিয়ে পড়ার একমাত্র কারণ হলো সঠিক ইলম বা জ্ঞান চর্চার অভাব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জ্ঞান হলো মুসলমানদের হারানো সম্পদ। যেখানে পাও কুড়িয়ে নাও।’ তাই আমাদের মুসলমানদের প্রয়োজন পবিত্র কুরআন ও সঠিক হাদিসের আলোকে নিজেদের ইলম বা জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করা। তবে সেই জ্ঞানকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে পারলে আসবে প্রকৃত সফলতা।

লেখক : প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, নোয়াপাড়া কলেজ

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালো থেকো ছোট্টবেলার স্মৃতি
পরবর্তী নিবন্ধআমার মা আমার শক্তি