বৈশাখী মিউ

আবদুল লতিফ | বুধবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

গাছে গাছে ঝুলে আছে কাঁচা পাকা আম। বেলা ঘনিয়ে এলেই বিকেলের দিকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ঢেকে যায় আকাশ, নেমে আসে অন্ধকার। সাথে গুরুগুরু শব্দ আর বিদ্যুৎ চমকানি। একটু পরেই দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে।

সুহাদের ঘরের টিনের চালে শুরু হয় আম পড়ার ধুপধাপ শব্দ। যদিও ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে ঘরের বাইরে যাওয়া মায়ের নিষেধ। কিন্তু আম পড়ার শব্দ সুহাকে সেই বারণ ভুলিয়ে দিয়েছে। দৌড়ে ছুটে গিয়ে সুহা আম কুড়াতে শুরু করে। কিন্তু ক’টা আম হাতে নিতেই মায়ের চোখ পড়ে সুহার উপর। কর্কষ কন্ঠের চিৎকার শুনে ঘরে ফিরে আসে সুহা। মা রাগান্বিত হয়ে বলেন কতোদিন বলেছি ঝড়ের সময় বাইরে যাওয়া নিষেধ? ঝড়ের সময় গাছের ডাল ভেঙে পড়তে পারে। তাছাড়া বর্তমানে সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় বজ্রপাত। বজ্রপাতে সারাদেশে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। তোমার কি এগুলো মনে নেই? সুহা মাকে বলে দুঃখিত আম্মু আর এমন ভুল হবে না। মা বলেন ঠিক আছে ঝড় শেষ হলে আমরা সবাই মিলে আম কুড়াতে যাবো। এ কথা শুনে সুহা এবং সাবা দুই বোনের চোখ খুশিতে চকচক করে উঠে। ঠিক এমন সময় একটা বিদ্যুৎ চমকানির সঙ্গে সঙ্গে ধুম করে ভীষণ শব্দে একটা বজ্রপাত। সুহা ভয়ে তার মা’কে জড়িয়ে ধরে। আর হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারে মায়ের বারণের কারণ।

এভাবে চলতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। বজ্রসহ বৃষ্টি এবং প্রচন্ড গতির ঝড়। জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরে যা দেখা যাচ্ছে তাতে বুঝা যাচ্ছে যেনো সব গাছপালা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে আর বাকি নাই দুই বোনের যে, গাছের আম সব পড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

এভাবে চলার অনেক্ষণ পর ঝড় থামে। সুহা এবং সাবা মা’কে নিয়ে বাইরে বের হয় একটা ঝুড়ি হাতে। শুরু হয় আমের জন্য ছোটাছুটি। এদিকে একটা বড়ো আম তো ওদিকে একটা পাকা আম। এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝুড়ি ভরে যায়। সাবা দৌড়ে ঝুড়ির আমগুলো ঘরে রেখে আবার খালি ঝুড়ি নিয়ে ফিরে আসে। এর মধ্যে সুহা আম্মু আম্মু বলে চিৎকার দিয়ে ডাকতে থাকে আর বলে দেখো দেখো এটা কী! মা এগিয়ে যায় সাথে সাবাও। গিয়ে দেখে ছোট্ট একটা বিড়াল ছানা বৃষ্টিতে ভিজে ঠকঠক করে কাঁপছে। তাদের দেখে অস্পষ্ট স্বরে মিউমিউ করে ডাকছে। মনে হচ্ছে সাহায্য চায়। দেখে সবারই খুব মায়া হয়। এদিকে অনেকদিন আগে থেকেই বিড়াল পোষার খুব শখ ছিলো সুহা এবং সাবার। তাই দুজনেই মা’কে বিড়াল ছানাটা নিয়ে নিতে অনুরোধ করলো। অবশ্য বাচ্চাটা দেখে মায়েরও খুব মায়া লাগছিলো। তাই বাচ্চাটার দিকে হাত বাড়াতেই তরতর করে এগিয়ে এলো যেন সে অপেক্ষাই করছিল।

ঘরে ফিরে বিড়াল ছানাটাকে যত্নের সাথে নরম কাপড় দিয়ে সুন্দর করে মুছে একটা পুরনো তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখে। কিছুক্ষণ পর মিউমিউ শব্দ পেয়ে বুঝতে পারে ছানাটার খিদে পেয়েছে। কিন্ত বিড়াল ছানাটা এতো ছোট যে সে এখনও নিজে খেতে শেখেনি। কি করা যায় চিন্তা করছিলো সবাই। এমন সময় সুহা বললো আচ্ছা আম্মু আমার ছোট সময়ের একটা ফিডার আছে ঘরে, এটা দিয়ে কি দুধ খাওয়ানো যাবে? মা বললেন, বেশ নিয়ে এসো তাহলে। সুহা দৌড়ে গিয়ে তার খেলনার ঝুড়ি থেকে খুঁজে সেই ফিডারটা নিয়ে এলো। একটু দুধ ভরে ফিডার মুখে লাগাতেই বিড়াল ছানাটা চুকচুক করে খেতে শুরু করলো। সবার চোখেমুখে তখন আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো।

কিন্তু বিড়াল ছানাটাকে কী বলে ডাকবে এই নিয়ে শুরু হলো আলোচনা। সুহা একটা নাম বলে তো সাবা আরেকটা কিন্তু কোনোটাই তারা চুড়ান্ত করতে পারছিলো না। তখন মা বললেন, এটার নাম হবে “বৈশাখি”। কারণ আজ যে ঝড় বয়ে গেছে তার নাম কালবৈশাখী ঝড়। কাল শব্দের অর্থ ধ্বংস এবং বৈশাখ মাসে উৎপত্তি হয় বলে একে কালবৈশাখী নামে অভিহিত করা হয়। তোমরা মনে রেখো বাংলা বছরের প্রথম মাসের নাম হলো বৈশাখ মাস আর এ মাসেই কালবৈশাখী ঝড় হয়। তাই এই মাসের নাম এবং ঘটনার সাথে মিলিয়ে আজ থেকে এর নাম হবে “বৈশাখী”। একথা বলার পর সাবা এবং সুহা দুজনেই সমস্বরে বললো ঠিক আছে এর নাম “বৈশাখী”। কিন্তু সুহা আবার বললো, আচ্ছা আম্মু আমাদের তো একটা ডাক নাম এবং আরেকটা বড়ো নাম আছে, তাহলে বৈশাখীর বড়ো নাম কি হবে? মা বললো তুমিই বলো তাহলে কি হতে পারে। সুহা বললো তার বড়ো নাম হবে “বৈশাখী মিউ”। নামটি সবারই খুব পছন্দ হলো এবং সবাই মিলে চুড়ান্ত করলো বিড়াল ছানার ডাক নাম “বৈশাখী” এবং বড়ো নাম “বৈশাখী মিউ”।

পূর্ববর্তী নিবন্ধময়না পাখি
পরবর্তী নিবন্ধঐতিহ্যের জব্বারের বলী খেলা