দেশে ফেরা প্রবাসী শ্রমিকদের কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে বিদেশে পাচারের অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার সংশ্লিষ্ট ধারায় দুদকের ঢাকার সমন্বিত কার্যালয়ে এ মামলা করা হয়। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান দুদক সচিব খোরশেদা ইয়সমিন। খবর বাংলানিউজের।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়–বিক্রয় ও বিদেশে পাচারের একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি টিমের মাধ্যমে এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালে বিমানবন্দরে অবস্থিত বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের বুথ এবং মানিচেঞ্জার কোম্পানির কার্যক্রম সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এসময় দেখা যায়, ওই ব্যাংক ও মানিচেঞ্জারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে অসাধু উপায়ে জাল ভাউচার তৈরি করে বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের নিকট হতে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়পূর্বক ব্যাংকিং চ্যানেলভুক্ত না করে বেআইনিভাবে কালোবাজারে বিক্রয় করছেন। এর ফলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেশের আর্থিকখাতে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে মর্মে তথ্যাদি উদঘাটিত হয়। পরবর্তীতে অভিযান পরিচালনাকারী টিমের প্রতিবেদনের আলোকে প্রকাশ্য অনুসন্ধান শুরু করা হয়।
আইন, বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়–বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট প্রদর্শন এবং ভাউচার বা এনক্যাশমেন্ট স্লিপ প্রদান, সিস্টেমে এন্ট্রি করে যথাযথভাবে হিসাব রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাংকের অধিকাংশ বুথ এবং মানি এক্সচেঞ্জ বুথে দায়িত্বরত অসাধু কর্মকর্তা তা প্রতিপালন করছেন না। ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারের অসাধু কর্মকর্তারা ভাউচার না দিয়ে বা জাল ভাউচার দিয়ে সরাসরি ফরেন কারেন্সি গ্রহণ করে তার বিনিময়ে টাকা দিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া তারা স্বাক্ষরবিহীন, ভুয়া ভাউচার বা এনকেশমেন্ট স্লিপ প্রদান করছেন। এই বিদেশি মুদ্রার ক্রয়কারী ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূল হিসাবে বা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অ্যাকাউন্টে মুদ্রা ক্রয়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করছেন না।
বিদেশি মুদ্রা অবৈধ ক্রয়–বিক্রয়ে ও মানিলন্ডারিংয়ে চারটি ব্যাংক এবং দুটি মানি এক্সচেঞ্জ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। অপরাধে জড়িতরা অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহপূর্বক মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের অবৈধভাবে মুদ্রা সরবরাহ করছেন। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুমোদনক্রমে সংশ্লিষ্ট ধারায় দুদকের সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা–১–এ বুধবার মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় মোট ২১ জনকে আসামি করা হয়েছে।