বৈঠক শেষে যা জানাল রাজনৈতিক দলগুলো

| বুধবার , ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে করার দাবি জানিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রয়োজনে জনগণের মতামত নিতে এর আগে গণভোট আয়োজনের কথা বলেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার বাসভবন যমুনায় আরও ৭ রাজনৈতিক দল ও একটি ইসলামী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের এমন দাবি তুলে ধরার কথা বলেছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ। দেড় ঘণ্টার এ বৈঠক শেষে যমুনার সামনে বিফ্রিংয়ে এসে তিনি পিআর পদ্ধতিতে (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে) নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার কথা তুলে ধরেন। পিআর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেনএমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনারা নোট রেখেছেন। উনারা বলেছেন চিন্তাভাবনা করবেন। খবর বিডিনিউজের।

বর্তমান আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কথা হওয়ার কথা তুলে ধরে আশরাফ আলী বলেন, আমরা বলেছি, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পাইনি।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, ৫৩ বছরে যে জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় নাই, রাষ্ট্রে কোনো মৌলিক সংস্কার হয় নাই। জনমতের শতভাগ প্রতিফলিত হয় নাই যে ধারার জন্য, সে ধারায় যদি আগামীতে আপনি নির্বাচন করেন, তাহলে পাঁচ বছর পর লিখতে হবে ৫৮ বছর পরেও হয় নাই। কাজেই যেই লাউ সেই কদু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কোনো প্রত্যাশা পূরণ হবে না। এজন্য আমরা বলেছি, পিআর (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে) নির্বাচন হতে হবে। ৯১টি দেশে পিআর পদ্ধতি আছে। তিনি বলেন, এটা বাস্তবায়নের জন্য আপনারা অতীতের মত একটা গণভোটের ব্যবস্থা করেন। উনারা নোট রেখেছেন। উনারা বলেছেন চিন্তাভাবনা করবেন।

দুই সমস্যা দেখছে গণসংহতি আন্দোলন : বিফ্রিংয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সুষ্ঠু নির্বাচন করার কথা বলেছেন। সেজন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পরামর্শ ও সহযোগিতা চেয়েছেন। আমরা বলেছি দুটো বিষয় নির্বাচনে সমস্যাজনক হয়ে উঠতে পারে। একটা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের যে কর্তব্য ছিল, সেটি যথার্থ হয়নি। হয়নি বলেই সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির… (উন্নতি হয়নি)। নানাভাবেই প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। আমরা মনে করছি পরিবেশের বিষয়টি নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এবং এটাই একটা বড় বাধা হয়ে উঠতে পারে।

তিনি বলেন, এজন্য আমরা বলেছি, ঐক্যমত্য কমিশনে প্রতিনিধিত্ব করা রাজনৈতিক দলগুলো, নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ, পরিস্থিতি সমন্বয় করার জন্য একটা কমিটি করা দরকার।

বিচারকে আরও দৃশ্যমান করা এবং সংস্কার কীভাবে হবে সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধের যে জায়গা তৈরি হয়েছে তা দূর করার কথাও বলেন তিনি। বলেন, আমরা বলেছি, যে সকল বিষয় সংবিধান সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলো অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

সরকারের কার্যক্রমে শৃঙ্খলার অভাব দেখছে এবি পার্টি : বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমরা বলেছি সরকারের কার্যক্রমে সুশৃঙ্খলতার অভাব দেখতে পাচ্ছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় দেখা গেছে, সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়হীনতা আছে। এটা ঠিক না হলে নির্বাচন নিয়ে সংশয় কাটবে না। এসব ঘটনায় সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতীয় ও জেলা উপজেলা পর্যায়ে একটি সমন্বিত কমিটি করার কথা বলেছি, যাতে আসনভিত্তিক সংকট সমাধানে তারা ভূমিকা রাখতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তাদের পুরো টিমে নিরপেক্ষ নির্বাচনের অভিজ্ঞতার একজনও নেই। আমরা বলেছি, যাতে আগে নিরপেক্ষ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আছে তাদের চুক্তিভিত্তিক হলেও নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছি।

নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে, জানতে চায় গণ অধিকার পরিষদ : গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, বৈঠকে নুরুল হক নুরের উপর হামলার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে আজ দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির কথা বলা হয়েছিল। আইন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি আজ রাতেই প্রকাশ করা হবে। নুরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে এটা সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা এখন প্রশাসন ও বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান তারা কি আপনার সরকারে আনুগত্য প্রকাশ করছে? সহযোগিতা করছে? আমরা দেখছি, করছে না। তাই আমরা বলেছি, এখানে দুটি সরকার কাজ করছে, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, আরেকটা অদৃশ্য সরকার।

তিনি বলেন, গণভোটের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণভোটের সুযোগ নেই। এখন যেহেতু রাজনৈতিক মহলে গণভোটের দাবি উঠেছে সেক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা কী হবে? নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে? সরকারের পক্ষ থেকে এটা স্পষ্ট করা হলে ধোঁয়াশা কেটে যায়। প্রত্যেকটা দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, সেজন্য আস্থা তৈরি করা দরকার।

বিফ্রিংয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী কথা বলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ফিরল সুপ্রিম কোর্টের হাতে
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে জুলাই হত্যাকাণ্ড