প্রতিবছর রমজান মাসে প্রায় পর্যটক শূন্য থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তবে পর্যটক না থাকলেও স্থানীয়দের ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজনের কারণে রমজান মাসেও বৈকালিক সৈকত হয়ে ওঠছে জমজমাট। আর গরম যত বাড়ছে, সৈকতে ইফতার অনুষ্ঠানের হারও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। গত রোববার বিকালে কক্সবাজার শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত সৈকতের বালুচরে কয়েক শত ছোট ছোট দল ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সপরিবারে অথবা বন্ধুবান্ধব মিলে এসব ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একেকটি দলে ৩/৪ জন থেকে ৩০/৪০ জন পর্যন্ত সদস্য থাকে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের বীচ কর্মী সুপারভাইজার মাহবুব আলম জানান, রমজান আসার পর থেকেই কক্সবাজার শহর থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতে প্রতিদিন শত শত মানুষকে ইফতার করতে দেখা যাচ্ছে। আর গরম বাড়ার সাথে সাথে সৈকতে ইফতার করা মানুষের হারও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত রোববার সমুদ্র সৈকতে কথা হয় শহরের রুমালিয়ারছড়ার বাসিন্দা আবুল কাশেমের সাথে। তিনি স্ত্রী–সন্তান ও বন্ধু–বান্ধবদের নিয়ে ইফতার করতে এসেছেন সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে। পাহাড়তলীর বাসিন্দা নুরুল আমিনও এসেছেন আরেকটি দলে। তারা বলেন, প্রতিবছর সৈকতে সপরিবারে ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ইফতার করতে আসি। এবারও আসলাম। সৈকতে ইফতার করার জন্য নুরুল আমিন ২৩ পদের ও আবুল কাশেম ১৯ পদের ইফতারি নিয়ে এসেছেন। ২/৩ টি আইটেম বাদে সবগুলো ঘরে পাক করা। তাই সৈকতের ইফতার অনুষ্ঠানেও একটা ঘরোয়া ভাব রয়েছে বলে জানান তারা। জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিগত কমিটির উপ দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক আবু তাহের আজাদ বলেন, রমজান শুরুর পর সৈকতে বেশ কয়েকবার ইফতার করেছি। সৈকতের মতো বিস্তীর্ণ খোলা প্রাঙ্গণে ইফতারের মজাই আলাদা। কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমির সভাপতি মুহম্মদ নুরুল ইসলাম ও লেখক নুরুল আজিজ চৌধুরী বলেন, ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি স্থানীয়রা রমজান মাসের কোন না কোন দিন শখ করে সৈকতেই ইফতার করে। তবে সাম্প্রতিককালে এর পরিসর অনেক ব্যাপক হয়েছে। কক্সবাজার শহর ছাড়াও জেলার অন্যান্য সমুদ্র তীরের বাসিন্দাদের কাছেও সৈকতে ইফতার করা একটি আবহমান সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠেছে বলে জানান কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী। স্থানীয়রা জানান, সৈকতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ইফতার করলেও সৈকতে কোন ইফতার বিক্রি হয় না। মূলত সেই ইফতার ঘরে প্রস্তুত করে অথবা দোকান থেকে কিনে সৈকতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সময় মতো সবাই ইফতার করে সৈকত ত্যাগ করে। তবে এসব ইফতার পার্টির অনেকেই তাদের পরিত্যক্ত বর্জ্য সৈকতেই রেখে যাচ্ছে। এতে সৈকতের সৌন্দর্য ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।