বে টার্মিনাল নির্মাণে নতুন অ্যাকশন প্ল্যান

তিনটি বড় কাজকে অন্তর্ভুক্ত করা হলো এক প্রকল্পে প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ ১৫ হাজার কোটি টাকা, ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে

হাসান আকবর | বুধবার , ৫ মার্চ, ২০২৫ at ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ

আগামী একশ বছরের বন্দর হিসেবে বিবেচিত বে টার্মিনাল নির্মাণে নতুন অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। পৃথক পৃথক প্রকল্প নিয়ে দৌড়ঝাঁপ না করে সমন্বিতভাবে একক প্রকল্পে অনেকগুলো কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বে টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে ব্রেকওয়াটার, নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল তৈরি এবং রেল ও সড়ক সংযোগসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের মতো বড় তিনটি কাজকে একই মলাটে অন্তর্ভুক্ত করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, নগরীর হালিশহর উপকূলে বে টার্মিনাল গড়ে তোলার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নতুন নতুন টার্মিনাল নির্মাণ, ইয়ার্ডসহ পশ্চাৎ সুবিধা তৈরি করা হলেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দেশের চাহিদা মেটাতে পারবে না। এক্ষেত্রে নতুন বন্দর নির্মাণ জরুরি। বে টার্মিনাল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান।

দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শুরু থেকে প্রকল্পটি নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। এতে করে প্রকল্পে প্রত্যাশিত গতি আসেনি।

বে টার্মিনালে তিনটি অংশ রয়েছে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, বে টার্মিনালে আপাতত তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে দুটি কন্টেনার টার্মিনাল এবং একটি মাল্টি পারপাস টার্মিনাল নির্মাণ, ব্রেকওয়াটার ও অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণ, রাস্তা ও রেল সংযোগ সড়ক, ড্রেনেজ সিস্টেমসহ আনুষাঙ্গিক কাজ রয়েছে।

প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা প্রকল্প করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলছে। কিন্তু কোনো কাজে প্রত্যাশিত গতি নেই।

বিষয়টি নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, বে টার্মিনাল বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের সব কাজ বন্দর কর্তৃপক্ষের। একই কাজের পৃথক পৃথক প্রকল্পের ফলে ধীরগতি, দীর্ঘসূত্রতা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্যসহ নানা প্রতিবন্ধকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় তিনটি বড় কাজকে একই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলে গতি আসবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বে টার্মিনালের চ্যানেল তৈরি, চ্যানেল ঘিরে ব্রেকওয়াটার নির্মাণ এবং টার্মিনালের সাথে রেল ও সড়ক সংযোগ স্থাপনসহ আনুষাঙ্গিক কাজগুলোকে এই প্রকল্পের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।

বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিটিএমআইডিপি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে বেশিরভাগ যোগান দেবে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বে টার্মিনালের চ্যানেল এবং ব্রেকওয়াটার নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য ৬৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করবে। এই ঋণের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এছাড়া বে টার্মিনালের সাথে রেলওয়ে ও মহাসড়কের সংযোগ স্থাপনের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে নতুন করে ১৯২ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হবে।

প্রস্তাবিত বিটিএমআইডিপি প্রকল্পে ব্রেকওয়াটার নির্মাণে ৮ হাজার ২৬৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল নির্মাণে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, নেভিগেশনে সহায়ক যন্ত্র স্থাপনে ৫৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং রেল ও সড়ক সংযোগসহ অন্যান্য স্থাপনার সাথে সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার ২৭২ কোটি ৪০ লাখ টাকার যোগান দেবে বিশ্বব্যাংক। বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪ হাজার ৬৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা প্রদান করার কথা রয়েছে। তবে চূড়ান্ত চুক্তির সময় টাকার হিসাব কিছুটা এদিকওদিক হতে পারে বলে বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

বে টার্মিনালের তিনটি বড় কাজকে একই মলাটে অন্তর্ভুক্ত করে তৈরি করা ডিপিপি ইতোমধ্যে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, উক্ত ডিপিপি অনুমোদনের পরপরই বিশ্বব্যাংকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বে টার্মিনাল নির্মাণে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। কিছুটা সময় লাগলেও দ্রুত সবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাঁচ হাজার ৪৯৩ চিকিৎসক নিয়োগ দেবে সরকার
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতি ট্রাকে ২শ জনের বদলে পাবে ৪শ জন