দুর্নীতি মামলার আসামি টেকনাফের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদকে তার বেয়াইয়ের গাড়িতে চড়িয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের হাজতখানা থেকে কারাগারে আনা হয়েছে! তবে শুধু জাফর নয়, সাম্প্রতিক সময়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে একাধিক বন্দীকে ভিআইপি সুবিধা দিয়ে ব্যক্তিগত ও ভাড়া গাড়িতে চড়িয়ে কারাগারে আনা-নেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। নিয়মানুযায়ী, পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে বন্দীদের চট্টগ্রাম কারাগারে আনা নেয়া করা হয়। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে কোনো নিয়মনীতি না মেনে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আদালতের হাজতখানা থেকে টেকনাফের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানকে জাফর আহমেদকে তার বেয়াইয়ের গাড়িতে করে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। দুদকের মামলায় গতকাল তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা আনুমানিক সাড়ে তিনটা নাগাদ চট্টমেট্রো-চ-৫১-০৬৬১ নম্বরের একটি নোহা গাড়িতে করে আসামি জাফর আহমেদকে নিয়ে চট্টগ্রাম আদালতের হাজতখানা থেকে রওনা দেন তিন পুলিশ সদস্য। নোহা গাড়িটির গন্তব্য ছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার পর্যন্ত। চট্টগ্রাম কারাগারে আসামি নিয়ে প্রবেশের পর নোহা গাড়িটি আধ ঘণ্টা কারা অভ্যন্তরে পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। পরে কারা কর্তৃপক্ষের হাতে আসামি বুঝিয়ে দিয়ে বিকেল ৪টা দুই মিনিটে কারাগারের প্রধান ফটক দিয়ে গাড়িটি বেরিয়ে আসে। কারাফটক থেকে বেরিয়ে কয়েক গজ দূরে সামনে আসার পর হঠাৎ গাড়িটি থেমে যায়। এসময় গাড়ির ভেতর থেকে এক এক করে সামনে ও পেছনে বসা তিন পুলিশ সদস্য নেমে আসেন। কারা রেজিস্ট্রারের তথ্যে জানা গেছে, ওই সময় হাজতখানা থেকে কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছিল দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত আসামি টেকনাফের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোহা গাড়িটি ছিল জাফর আহমেদের বেয়াই মো. হাসেম সিআইপির। তাঁরই গাড়িতে করে আদালতের হাজতখানা থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় জাফর আহমেদকে।
জানতে চাইলে বিকেলে মোবাইল ফোনে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান আজাদীকে বলেন, আমি বিষয়টি দেখে পরে জানাচ্ছি। কিছু সময় পর সিনিয়র জেল সুপার ফোন করে জানান গাড়িটিতে বিশেষ কোনো আসামিকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে তিনি আসামির নাম বলতে পারেননি। পরে সিনিয়র জেল সুপারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। ঘটনার পর নগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী কমিশনার কাজী শাহাবুদ্দিনের সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে জানতে চাইলে জাফরের বেয়াই নোহা গাড়িটির মালিক মো. হাসেম সিআইপি রাতে আজাদীকে জানান, তার নিজের গাড়িতে করেই গতকাল তার বেয়াই জাফর আহমেদকে আদালতের হাজতখানা থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী আজাদীকে বলেন, হাজতখানা থেকে পুলিশের প্রিজন ভ্যান ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি বা বিকল্প কোনো গাড়িতে আসামিকে ভিআইপি সুবিধা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে থাকে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সময় এ ধরণের অভিযোগ পেয়ে থাকি। এক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আসামিদের ভিআইপি সুবিধা দেয়া হয় বলে জানান তিনি।
সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারিসহ গত দুই মাসে হাজতখানা থেকে একাধিক আসামিকে ভিআইপি সুবিধায় বিকল্প গাড়িতে চড়িয়ে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।