‘নার্সদের ডাকলে পাওয়া যায় না। কিছু বলতে গেলে বরং বিরক্ত হন। জরুরি মুহূর্তে ডাকলেও তারা আসেন নিজেদের সময়মতো। দ্বিতীয়বার ডাকতে গেলে অনেকে দুর্ব্যবহারও করেন।’
নার্সদের সেবা বিষয়ে এই অভিযোগ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন প্রসেনজিৎ নামে এক রোগীর। কেবল প্রসেনজিৎ নন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগী মাত্রই নার্সদের বিষয়ে এমন নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। খুব কম সংখ্যক রোগীর মুখেই নার্সদের সেবা বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য শোনা যায়।
এদিকে, সিনিয়র স্টাফ নার্স পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীত করার পর সেবায় আরো বেশি আন্তরিক হওয়ার কথা থাকলেও বরং তার উল্টোটা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন– চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পর নার্সদের মাঝে বরং কিছুটা নেতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান। রোগীদের সেবায় তারা আগে যে কাজগুলো করতেন, এখন আয়া বা ওয়ার্ডবয় দিয়ে তারা এসব কাজ করাতে চান। অনেক নার্স ডাক্তারদেরও মানতে চান না। সময়ে সময়ে এমন অভিযোগও পাওয়া যায়। তবে নার্সদের দাবি, আগে নার্স সংকট প্রকট ছিল। প্রতি ওয়ার্ডে দুইশ জন রোগীর বিপরীতে নার্স ছিল বড়জোর আট থেকে দশজন। কোনো ওয়ার্ডে এর চেয়েও কম। তিন শিফটে ভাগ করলে প্রতি শিফটে দাঁড়ায় তিন বা চারজন। বিশাল সংখ্যক রোগীর দেখভাল করতে গিয়ে নার্সরা দিশেহারা হয়ে পড়তেন। তিন/চারজন নার্সের পক্ষে দুই–আড়াইশ রোগীর সেবা দেয়া তো সম্ভব না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ ছিল রোগীদের। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে। কয়েক দফায় নিয়োগের মাধ্যমে নার্সের সংখ্যা বেড়েছে। সংখ্যা বাড়ায় বেড়েছে সেবাও। আর অভিযোগের কথা যেভাবে বলা হচ্ছে, আগের মতো এমন খারাপ পরিস্থিতি নেই বলে দাবি চমেক হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়কের পদ থেকে সম্প্রতি অবসরে যাওয়া ইনসাফি হান্নার। তিনি দাবি করেন– নার্সদের বিরুদ্ধে যেভাবে ঢালাও ভাবে অভিযোগ আনা হয়, তা ঠিক নয়। সবাই একরকম না। অনেকেই কিন্তু আন্তরিকভাবে সেবা দেন। তবে সেটি তেমন প্রচার হয় না। পজিটিভ বিষয়গুলোও সমানভাবে প্রচার হলে নার্সদের মাঝে মোটিভেশন কাজ করতো, তারা সেবাদানে আরো বেশি আন্তরিক হতেন।
অন্যদিকে, আজ (১২ মে) বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। সমাজের প্রতি নার্সদের অবদান ও মানুষের সেবায় যেভাবে তারা কাজ করেন তা সবার সামনে তুলে ধরতে এই দিনটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। আধুনিক নার্সিং পেশার রূপকার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন উপলক্ষে এ দিবস পালন শুরু হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আমাদের নার্স; আমাদের ভবিষ্যৎ’। দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজসহ বেশ কয়টি সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫/৬ বছর আগেও হাসপাতালে নার্সের সংখ্যা ছিল পাঁচশোর মতো। তবে বর্তমানে নার্সের এ সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। এখন সবমিলিয়ে সাড়ে বারশ (১২৫৩ জন) নার্স কর্মরত আছেন চমেক হাসপাতালে।
যদিও হাসপাতালে নতুন নতুন বিভাগ চালু হওয়ায় নার্সের এ সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন সেবা তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে দায়িত্বরত একাধিক নার্স। আরো নার্স প্রয়োজন বলে জানান তারা। অনেকের অভিযোগ– রোগীর সেবার পাশাপাশি নার্সদের অন্যান্য কাজও করতে হচ্ছে। রোগীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে এখনো হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে নার্সদের। সবমিলিয়ে সংকট থাকছেই।
তবে যে সংখ্যক নার্স রয়েছে, তা দিয়ে ভালো ভাবেই সেবাদান সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসক ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, নার্সের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটি একেবারে অমূলক নয়, আবার পুরোপুরি ঠিক তাও বলা যাবে না। কারণ সেবার মান কিন্তু তুলনামূলক বেড়েছে। তবে এটি ঠিক যে– নার্সরা আরেকটু আন্তরিক হলে সেবার মান আরো বাড়বে। রোগীদের মাঝে সন্তুষ্টির হারও বাড়বে।