দ্রুত বাড়ছে ডলারের দাম। টাকার বিপরীতে ডলারের চড়া ভাব দেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী সংকট সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে পণ্যমূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ডলারের দরের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তোলার আশংকা দেখা দিয়েছে। কার্ভ মার্কেটে গতকাল প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৯০.২০ টাকা দরে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভেঙে কোটি কোটি ডলার বাজারে ছাড়লেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দর নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এ সংকট মোকাবেলায় সরকারকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দাম ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি ডলারের চাহিদা ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে।
আন্তঃব্যাংক লেনদেনে গতকাল ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা। কিন্তু ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছে ডলার বিক্রি করছে ৮৮ টাকারও বেশি দরে। তবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। যে কেউ বিদেশ যাওয়ার সময় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পাসপোর্টে এনড্রোর্স করে ডলার ক্রয় করতে পারেন। প্রত্যেক ব্যক্তি পুরো বছরের জন্য সাত হাজার ডলার কিনতে পারেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ডলার দিতে পারছে না। অনেকেই কার্ভ মার্কেট থেকে ডলার কিনে ব্যাংক থেকে পাসপোর্টে এনড্রোর্স করে নিচ্ছেন।
একাধিক ব্যাংকার নিজেদের শাখায় কোন ডলার না থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন, আমদানি বাণিজ্য ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ার বিপরীতে রেমিট্যান্স প্রবাহে নিম্নগতিই ডলার সংকটের মূল কারণ। বাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত আগস্ট মাস হতে এ পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে বাজারে ছেড়েছে ১৪০ কোটি ডলারেরও বেশি। শুধু চলতি অক্টোবরেই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৭০ কোটি ডলারের চাহিদার কথা জানানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। রিজার্ভ থেকে কোটি কোটি ডলার বাজারে ছেড়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমদানি বেড়ে যাওয়া, বিভিন্ন দেশে পর্যটন, অধ্যয়ন, ধর্মীয় ও চিকিৎসার জন্য মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ একেবারে কমে গেছে। বিদেশ থেকে দেশে আসা লোকজন খুব বেশি ডলার আনছেন না। কার্ভ মার্কেটে ডলার বিক্রি করতে তেমন কেউ আসেন না, সবাই ডলার কিনতে ভিড় করছেন বলে জানালেন নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার ডলার ব্যবসায়ী শওকতুল আলম। তিনি বলেন, আগে আমরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ডলার কিনে বিক্রি করতাম। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ডলার বিক্রির জন্য তেমন কেউ আসছেন না। শুধু ক্রেতা ভিড় করছেন। গত দুইদিনে তিনি কোন ডলার কেনার সুযোগ পাননি, তাই বিক্রিও করেননি।
গতকাল একাধিক ব্যাংকারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডলার সংকট প্রকট। প্রয়োজনীয় ডলার মিলছে না।
রেমিটেন্স মুলত এই সংকট তৈরি হয়েছে বলেও তারা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভেঙ্গে ডলার বিক্রি করছে বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রচুর ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু চাহিদা এত ব্যাপক যে তা কোনভাবেই সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে ডলারের দাম। ব্যাংকের সাথে কার্ভ মার্কেটের প্রায় পাঁচ টাকার ব্যবধানের কোন রেকর্ড অতীতে ছিল না বলেও তারা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়ার বিষয়টি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন- এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় ক্রয়-বিক্রয় করে ডলারের সাথে টাকার বিনিময় হার স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে। বর্তমান উদ্যোগও ওই প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। তিনি পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়াকেই সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে গতবছরের একই সময়ের তুলনায় পণ্য আমদানি বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। গতবছরের একই সময়ের তুলনায় এবছর এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৪৮.৬০ শতাংশ। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩৬.১০ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯.৪৪ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে। অথচ আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছিল ৪৮.৫৪ শতাংশ। রেমিট্যান্সের নেতিবাচক ধারা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেই সংকট তৈরি করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।