বেহাত হওয়া ভূ-সম্পত্তি উদ্ধারে মাঠে নামছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে সংস্থাটির ২৪৪ দশমিক ৮৬৫৩ একর ভূ-সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই আছে বেদখল হয়ে। এর বাইরে অন্যান্য সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন সময়ে সংস্থাটিকে তাদের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়। সেগুলোও বেশিরভাগ বেহাত হয়ে আছে। এ অবস্থায় চসিক প্রশাসকের নির্দেশে বেহাত হওয়া সম্পদ উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে রাজস্ব বিভাগ।
অভিযোগ আছে, তদারকির অভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা চসিকের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে আছে। অবশ্য বেহাত হতে যাওয়া জায়গাগুলো উদ্ধারে চসিকের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ মাঝে মাঝে তৎপর হয়। বেদখলে থাকা জায়গা উদ্ধারে অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু ধারাবাহিকতা না থাকায় কার্যকর ফল আসে না। ফলে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নানাভাবে বেদখল হতে থাকে চসিকের সম্পত্তি।
এদিকে বেহাত হওয়া সম্পদ উদ্ধারে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এর প্রেক্ষিতে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। প্রথম ধাপ হিসেবে গতকাল জনস্বার্থে একটি নোটিশ জারি করেছেন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম। ওই নোটিশে সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন যেসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলে রয়েছে তাদেরকে সাতদিনের মধ্যে অবৈধ দখল ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় উচ্ছেদের মাধ্যমে অবৈধ দখলমুক্ত করার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অবৈধ দখলদার সর্ম্পকিত তথ্য এস্টেট অফিসার মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে জানানোর অনুরোধ জানানো হয়। এক্ষেত্রে তথ্য দাতাদের নাম ঠিকানা গোপন রাখার পাশাপাশি পুরস্কার দেয়ারও ঘোষাণা দেয় হয়।
এ বিষয়ে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, অনেক জায়গায় সিটি কর্পোরেশনের সম্পদ বেদখল হয়ে আছে। সেগুলো উদ্ধার করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবো। প্রয়োজনে সেখানে আয়বর্ধক প্রকল্প করবো, দরকার হলে জনকল্যাণমূলক কাজেও ব্যবহার করা যাবে। অবৈধ দখলদার বিষয়ে ইতোমধ্যে নাগরিকরা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে স্টেট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাগরিকায় রাস্তার মোড়ে চসিকের একটি জায়গা বেহাত হয়ে আছে। সম্প্রতি জায়গাটির বিষয়ে খবর পেয়ে সিডিএ, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে এবং সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে সার্ভে করছে। এছাড়া নিমতলা এলাকায় উচ্ছেদ হওয়া একটি জায়গা আবারো দখল করে নিয়েছে অবৈধ দখলদাররা। সেখানে সিটি কর্পোরেশন কাঁটাতারের বেড়া দিলেও তা ভেঙে ফেলেছে দখলদাররা। একইভাবে বিভিন্ন জায়গায় দোকান-পাট নির্মাণ করে দখল করা হয়েছে চসিকের সম্পত্তি।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে একবার অবৈধভাবে দখল হওয়া সম্পদ উদ্ধারে উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই সময় চসিকের প্রণীত তালিকা অনুযায়ী সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৩৪ দশমিক ০৮০০ একর। এরপর সম্পত্তির বিষয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক আরেকটি তালিকা করা হয় ২০১৮ সালে। এতে ৪১ ওয়ার্ডে ২৪৪ দশমিক ৮৬৫৩ সম্পত্তির তথ্য প্রকাশ করে স্টেট শাখা। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সরকারি-বেসরকারি ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিজ উদ্যোগে সাতদিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু এসব উদ্যোগ পরে ঝিমিয়ে পড়ে।
চসিকের এস্টেট অফিসার মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নিজস্ব ভূ-সম্পত্তির বিষয়ে আমাদের কাছে রেজিস্টার আছে। এর বাইরে বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া জায়গার রেজিস্টার থাকে না। যেমন, কোন সংস্থা একটা রাস্তার উন্নয়ন করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করলেন। যেহেতু এটা কেনাবেচার জায়গা না তাই এর তথ্য ভূ-সম্পত্তির রেজিস্টারে থাকে না। এখন ওই রাস্তা দখল করে কেউ যদি অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে সেটা অনেক সময় আমাদের নলেজে থাকে না। তাই প্রশাসক মহোদয় চাচ্ছেন, এ বিষয়ে তথ্য আপডেট করা। ডাটাবেজ তৈরি। সফটওয়ারে আপডেট থাকলে এক ক্লিকেই কোথায় কি সম্পত্তি আছে তা জানা যাবে। এ বিষয়ে আমরা কাজও শুরু করেছি।
এ কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে কিছু কিছু তথ্য পাচ্ছি। যেগুলো কাগজেপত্রে আমাদের সম্পত্তি হলেও অন্য কেউ সেখানে আছেন। এটাকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে নিয়ে মানুষকে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছি।