বেসরকারি হাসপাতালে মিলছে না কেবিন

চট্টগ্রামে আরো ২ জনের মৃত্যু, পজিটিভ হলেই আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মৃত্যু এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই দেড়শর কাছাকাছি লোক আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগীদের সেবা দিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর চাপ বাড়ছে। গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও মিলছে না কেবিন কিংবা সাধারণ বেড।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মধ্যেও ওষুধ ও স্যালাইন নিয়ে নিয়ে চলছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি। ওষুধের দাম দুইগুণতিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে চলতি বছরের রেকর্ড সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে সেই সংখ্যা ৭ হাজার ৯৬৭ জন। কেবল চলতি সেপ্টেম্বরেই আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৮০ জন। সেপ্টেম্বরে মারা গেছেন ১৫ জন। সব মিলিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৬৮ রোগী।

গতকাল ডেঙ্গুতে আরো দুই জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এদের একজন ৭৩ বছর বয়সী চিত্তরঞ্জন পাল ও অপরজন ৫৫ বছর বয়সী ভোলা রাম দাশ। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, মৃত দুই জনের মধ্যে চিত্তরঞ্জন পাল গত ৫ সেপ্টেম্বর ও ভোলা রাম দাশ গত ৯ সেপ্টেম্বর নগরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর চিত্তরঞ্জন পাল এবং ১৮ সেপ্টেম্বর ভোলা রাম দাশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৭ জন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড চালু হয়েছে। এসব ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকছে। এছাড়া অনেক রোগী জ্বরকে অবহেলা করে সময় মতো ডেঙ্গু পরীক্ষা করান না। শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে চিকিৎসার কাছে যাচ্ছেন। এসব রোগীদের চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের বাইরে বেসরকারি হাসপাতালেও রয়েছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ। অনেক রোগী বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে কেবিন পাচ্ছেন না। নিরূপায় হয়ে তারা বাসায় চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াছ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের ১৫টি উপজেলার প্রত্যেকটি স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ৫টি করে ডেডিকেটেড ডেঙ্গু রোগীর বেড রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চমেক হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালেও পর্যাপ্ত বেড রয়েছে। আসলে ডেঙ্গু রোগীর মূল চিকিৎসা হচ্ছে ফ্লুইড ম্যানেজম্যান্ট। অনেক অনেক রোগী এনএসওয়ান রিপোর্ট হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এটি আসলে কোনো দরকার নাই। ডেঙ্গুর প্ল্যাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন ইন্টারনাল ব্লিডিং শুরু হয়। তখন ক্রিটিকাল কেয়ার ম্যানেজম্যান্টের প্রয়োজন পড়ে। আবার প্ল্যাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর। তখন শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্ল্যাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আসলে প্ল্যাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে। কাজেই ডেঙ্গু পজিটিভ হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে ডেঙ্গুতে ১৭ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩০৮৪
পরবর্তী নিবন্ধনগরে গ্যাসের এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন চুক্তি আজ