স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন চট্টগ্রামে এসেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের কার্যক্রম ও কিছু ত্রুটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অভিযানে ডা. সামন্ত লাল সেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের ইউনিফর্ম না থাকা, সাকার মেশিন না থাকা, খালি অঙিজেন সিলিন্ডার, বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সনদ ও লাইসেন্স সাধারণের নজরের বাইরে লাগানো, সিটিস্ক্যান বাবদ দুই রোগীর কাছ থেকে দুই রকম বিল আদায়সহ নানা অসংগতি দেখেন। এসব কারণে হাসপাতাল বিভাগের পরিচালককে ওই হাসপাতালে সতর্কীকরণ নোটিশ জারির নির্দেশ দেন তিনি।
এদিকে, নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার দায়ে নগরীর প্রবর্তক মোড় এলাকার সেন্ট্রাল সিটি হাসপাতাল আগামী ৮ জুলাই থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে ৩ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান সিভিল সার্জন বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে হাসপাতালটি সাময়িক বন্ধের নির্দেশনা দেন। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, এর আগেও হাসপাতালটির নানা অনিয়ম পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠির প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যমান জনবল, অবকাঠামো, চিকিৎসা সরঞ্জাম সব মিলিয়ে দেশের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসাসেবা যেমন চালু রয়েছে, তেমনিভাবে বেসরকারি পর্যায়ের এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মনোবৃত্তি থাকা বাধ্যতামূলক। মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করাও জরুরি। সরকারের বিদ্যমান নিয়মনীতি মেনেই স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনা করতে হবে। যদি তা মান্য করা না হয় তাহলে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক অনুমোদন দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করছে কি না, আইসিইউ আছে কি না, গাইডলাইন অনুসরণ করছে কি না– তা নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিয়মিত বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। এটা হয় না বলেই ব্যাঙের ছাতার মতো যেখানে–সেখানে গজিয়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যদি সব ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে তারা অপারেশন করতে পারবে না। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে চিকিৎসায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর হার হ্রাস পাবে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রাণগোপাল দত্ত বলেছেন, চিকিৎসাসেবা পাওয়া জনগণের একটি মৌলিক অধিকার। তাই পথঘাটের ছিন্নমূল মানুষ থেকে শুরু করে শত কোটি টাকার মালিক–সবার জন্যই যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। যাদের আয় সীমিত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা যারা দিন এনে দিন খায়, তাদের একজনও যেন বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে এ সুন্দর পৃথিবী থেকে বিদায় না নেয়, তা নিশ্চিত করার দায় আমাদেরই। এ বিষয়টা উপলব্ধি করে তা নিশ্চিত করা খুব জরুরি। শুধু সরকার অথবা ডাক্তার নয়, প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের মালিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি, ফার্মেসি, চিকিৎসা সহকারী, নার্স, থেরাপিস্ট সকলের সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমেই চিকিৎসা সেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গত কয়েক দশকে অবকাঠামোগত আধুনিকায়ন হলেও রোগীদের আস্থা বাড়েনি। ভুল রোগ নিরীক্ষা, বিশেষায়িত চিকিৎসা না পাওয়া, প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। অথচ বছরে স্বাস্থ্যসেবার পেছনে যে খরচ হচ্ছে তার ২৪ শতাংশই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে ব্যয় করছে রোগীরা। দেশে চিকিৎসা ব্যয় আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেলেও রক্ষা হচ্ছে না রোগীর অধিকার। যেভাবেই হোক চিকিৎসা–ব্যয়ও কমাতে হবে। তাঁরা বলেন, চিকিৎসায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর হার কমাতে এবং শতভাগ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষের উচিত দেশের প্রতিটি হাসপাতালে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা, চিকিৎসকদের সব সুবিধা নিশ্চিত করে রোগীদের যথাযথ সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা।