বেসরকারি ল্যাবে ছুটতে হচ্ছে প্রার্থীদের

সরকারি চাকরিতে যোগদানে ডোপ টেস্ট

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ

সরকারি চাকরিতে যোগদানে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করে কয়েক বছর আগেই পরিপত্র জারি করে সরকার। এরপর থেকে সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে স্বাস্থ্যগত অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি ডোপ টেস্টের রিপোর্টও জমা দিতে হয় নির্বাচিত প্রার্থীদের। এসব পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রার্থীর স্বাস্থ্যগত সনদ বা প্রত্যয়ন দিয়ে থাকে সিভিল সার্জন কার্যালয়। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে নির্বাচিতদেরও ডোপ টেস্টসহ স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সদ্য প্রকাশিত ফলাফলে চট্টগ্রাম জেলায় মোট ১ হাজার ২০২ জন প্রার্থী প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচিত এসব প্রার্থীদের স্বাস্থ্যগত সনদ বা প্রত্যয়ন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আর স্বাস্থ্যগত সনদ বা প্রত্যয়নের জন্য ডোপ টেস্টসহ মোট ৬টি টেস্ট করাতে হচ্ছে প্রার্থীদের।

অন্যান্য টেস্টের মধ্যে ইউরিন, ব্লাড গ্রুপ, এক্স-রে ও ইসিজি (বয়স চল্লিশোর্ধ হলে ইসিজি প্রয়োজন) অন্যতম। এসব তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, স্বাস্থ্যগত সনদের জন্য ডোপ টেস্টসহ আরো কয়েকটি টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে হয় প্রার্থীদের। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল-ল্যাবের রিপোর্টও গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ বেসরকারি ল্যাবের রিপোর্ট হলেও সমস্যা নেই। একজন প্রার্থীর বাড়ি যদি পটিয়া হয়, তবে তিনি পটিয়ার কোনো বেসরকারি ল্যাব (অনুমোদিত) থেকেও এসব টেস্ট করাতে পারবেন। আমরা বিষয়টি প্রার্থীদের জানিয়ে দিয়েছি। প্রার্থীদের জমা দেয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা তাদের স্বাস্থ্যগত সনদ বা প্রত্যয়ন দিয়ে থাকি।

এদিকে, প্রয়োজনীয় টেস্টগুলোর মধ্যে ডোপ টেস্টের জন্য এখন বেসরকারি ল্যাবে ছুটতে হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলায় নির্বাচিতদের। সরকারি হাসপাতালে ডোপ টেস্টের সুবিধা অপ্রতুল হওয়ায় বাধ্য হয়েই বেসরকারি ল্যাবে ছুটতে হচ্ছে তাদের। অথচ বেসরকারি ল্যাবগুলোতে এই টেস্ট ফি সরকারি হাসপাতালের তুলনায় অন্তত কয়েক গুণ বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সরকারি পর্যায়ে কেবল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেই এই ডোপ টেস্ট সুবিধা রয়েছে। কিন্তু পেশাদার চালকদের ডোপ টেস্ট করাতেই কাহিল অবস্থা এ হাসপাতালে। জনবল সংকটে শুরুতে দৈনিক ২৫ জনের ডোপ টেস্ট করলেও পরবর্তীতে এ সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে দৈনিক দেড়শ জনের ডোপ টেস্ট হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে ডোপ টেস্টের ফি ৯০০ টাকা। আর ডোপ টেস্ট, ইউরিন, ব্লাড গ্রুপ, এঙ-রে ও ইসিজিসহ মোট ৬টি পরীক্ষায় সব মিলিয়ে খরচ পড়ে দেড় হাজার টাকার মতো। কিন্তু বেসরকারি ল্যাবে এসব পরীক্ষার ফি ৩ হাজার টাকার বেশি। এপিক হেলথ কেয়ারে এই ৬টি টেস্টের নিয়মিত ফি ৫ হাজার ৪৭০ টাকা। তবে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদে নির্বাচিতদের জন্য এই ৬টি টেস্টের প্যাকেজ মূল্য ৩ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান এপিক হেলথ কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক টিএম হান্নান। আর পার্শ্ববর্তী পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একই প্যাকেজের ফি রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা।

এ তথ্য নিশ্চিত করে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার ওয়ালী আশরাফ খান আজাদীকে বলেন, ডোপ টেস্টের এই প্যাকেজের নিয়মিত ফি ৭ হাজার ২০০ টাকা। তবে এখন আমরা ডিসকাউন্ট দিয়ে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় প্যাকেজটি করে দিচ্ছি। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদে নির্বাচিতদের অনেকেই এই প্যাকেজে টেস্ট করাচ্ছেন বলে জানালেন বেসরকারি ল্যাব দুটির কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে, পেশাদার চালকদের ডোপ টেস্টে অতিরিক্ত চাপ থাকলেও প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদে নির্বাচিতদের ডোপ টেস্টও করা হচ্ছে বলে জানান চমেক হাসপাতালের প্যাথলজি ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া। তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষক পদের যারা আসছেন, আমরা কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের সিডিউল দিচ্ছি। যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যেই তারা রিপোর্ট পেতে পারেন। জনবলসহ বিভিন্ন সংকটের মাঝেও সেবার পরিসর বাড়াতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে বলে দাবি শুভাশীষ বড়ুয়ার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্দামানে ভাসমান রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের আহ্বান জাতিসংঘের
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি কি দেশে মার্শাল ডেমোক্রেসি আনতে চায়