চট্টগ্রাম বন্দরের জট সামলাতে প্রথমবারের মত বেসরকারি জেটি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি হোঁচট খেয়েছে। বিপুল আয়োজনের মধ্যে নদীর দক্ষিণ পাড়ের দুটি জেটি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হয়নি। ভাটার সময় জাহাজের তলা মাটিতে লেগে যাওয়ায় জাহাজটিকে পুনরায় বহির্নোঙরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে জেটি নির্মাণের বিপুল সম্ভাবনা কিংবা বেসরকারি জেটিগুলো ব্যবহারের আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা কতটুকু কার্যকর করা যাবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় হওয়ায় প্রচুর পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল মাস কয়েক আগে। ইতোমধ্যে পণ্যগুলো আসতে শুরু করেছে। প্রচুর পণ্যবাহী জাহাজ আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ইতোমধ্যে বন্দরের বহির্নোঙরে জট দেখা দিয়েছে। পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করে বার্থিং নিতে হচ্ছে। গত মাস দুয়েক ধরে স্ক্র্যাপবাহী একেকটি জাহাজকে গড়ে ১৫ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বার্থিং না পাওয়ায় বিদেশ থেকে আসা মাদার ভ্যাসেলগুলোকে লাখ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। একেকটি জাহাজের বিপরীতে তিন চার কোটি টাকা পর্যন্ত ফিক্সড অপারেটিং কস্ট বা এফওসি বাবদ গচ্ছা দেয়ার রেকর্ডও রয়েছে। এসব টাকা সরাসরি বিদেশী জাহাজ মালিকের একাউন্টে চলে যায়। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা যোগান দিতে হয় দেশের আমদানিকারকদের। জট পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিশেষায়িত জেটিগুলো ব্যবহার করছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে সম্প্রতি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে নির্মিত দুটি বেসরকারি জেটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় একটি বেসরকারি কোম্পানির নির্মিত উক্ত জেটি গতকাল বুধবার উদ্বোধন হওয়ার কথা। এদিন চট্টগ্রাম বন্দরে আসা স্ক্র্যাপবাহী একটি জাহাজ সেখানে বার্থিং নেওয়ার কথা ছিল। এই উপলক্ষে মেজবানসহ ব্যাপক আয়োজন করা হয়। উৎসবমুখর পরিবেশের মাঝে বহির্নোঙর থেকে আনা হয় জাহাজ। ১৫ হাজার ২শ’ টন স্ক্র্যাপবাহী এমভি ডিনা ওশন নামের জাহাজটি বার্থিং দেয়ার জন্য আনা হয় জেটিতে। ১৫৪ মিটার লম্বা এবং ৮.৪ মিটার ড্রাফটের মাঝারি সাইজের একটি জাহাজকে আনা হয় জেটিতে। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও জাহাজটিকে জেটিতে ভেড়ানো যায়নি। ভাটার সময় জাহাজের তলা মাটিতে আটকে যাওয়ায় জাহাজটিকে পুনরায় বহির্নোঙরে ফিরিয়ে নিতে হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বেসরকারি জেটি ব্যবহারের প্রথম উদ্যোগই ভন্ডুল হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। ড্রাফট স্বল্পতার কারণে এই ধরনের জাহাজ এই জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব হবে না বলে সূত্র জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ভুল তথ্যের কারণে এমনটি হয়েছে। বলা হয়েছিল জেটিতে দশ মিটারের মতো ড্রাফট রয়েছে। তাই ৮.৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ অনায়াসে ভিড়ানোর সুযোগ থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে জেটিতে আট মিটার ড্রাফটও নেই। তাই ৮.৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মাটিতে আটকে যাচ্ছিল। এতে করে স্ক্র্যাপবাহী জাহাজটিকে ফিরিয়ে নিতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জেটি এলাকার ড্রাফট বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওখানে ড্রেজিং করে ড্রাফট বাড়ানো হবে। অন্তত এক থেকে দেড় মিটার ড্রাফট বাড়ানো গেলে ওই জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। তবে ড্রেজিং করে ড্রাফট ঠিকঠাকভাবে রক্ষা করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অপরদিকে নদীর অপরপাড়ে ড্রেজিং করার কোনো নেতিবাচক প্রভাব নদীর গতিপথে পড়ে কিনা তা নিয়েও পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।