বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশু সম্ভাবনাময়

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আজ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

‘এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি’। এ বছর বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের এটিই প্রতিপাদ্য বিষয়। সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও আজ পালন হবে ১৫তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে আজ শনিবার বিকেলে নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশন থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে অটিজম শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অটিজম উত্তরণে আলোকিত মা সম্মাননা এবং দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে আজকের আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংবর্ধেয় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক এবং সংবর্ধেয় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. বাসনা মুহুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মাহফুজা আক্তার। বিশেষ অতিথি থাকবেন সমাজসেবা অধিদফতর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ওয়াহিদুল আলম, সাবেক জেলা লায়ন্স গভর্নর শ্রীপ্রকাশ বিশ্বাস। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান এম জহিরুল ইসলাম রিংকু, সদস্য সচিব সাংবাদিক এম নাসিরুল হক এবং কবি তুষার দাশ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. বাসনা মুহুরী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি খোরশেদুল আলম কাদেরী, সহ সভাপতি রোশাঙ্গীর বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত বিকাশ চৌধুরী, অধ্যাপক টিংকু চৌধুরী ও অধ্যাপক ড. সুদীপ পাল।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার সভাপতি ডা. বাসনা মুহুরী বলেন, একসময় অটিজম ছিল একটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য ইস্যু। এ সম্পর্কে সমাজে নেতিবাচক ধারণা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ও স্কুল সাইকোলজিস্ট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ২০০৭ সালে এ বিষয়ে দেশে কাজ শুরু করেন। সায়মা ওয়াজেদ এ অবহেলিত জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে তার বিরাট অবদানের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছেন।
তিনি আরও জানান, আমাদের সমাজে অনেক ব্যক্তি বা পরিবার রয়েছেন যাদের অটিজমে আক্রান্ত শিশু রয়েছে। এই শিশুরা আমাদের সমাজেরই অংশ। প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও সুযোগ পেলে তারাই পরিণত হবে সম্পদে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অটিজমকে অনেকেই রোগ বলে অভিহিত করেন। অনেকে এখনও অটিস্টিক শিশু দেখলে তাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে থাকেন, তাদের বাবা-মাকে নিয়ে নানাভাবে কুসংস্কারের বলী করা হয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এটা প্রকট! কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বর্তমানে অটিজম নিয়ে বাংলাদেশ তথা বিশ্বজুড়েই নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সবার মধ্যে বেড়েছে সচেতনতা।
ডা. বাসনা মুহুরীর জানান, অটিজম কোনো রোগ নয়। এটি একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। শিশুর জন্মের প্রথম দুই-তিন বছরের মধ্যেই এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। অটিস্টিক শিশু বোকা কিংবা অমেধাবী। মোটামুটি বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশু অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হয়। প্রতি ১০ জন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে একজনের ছবি আঁকায়, গানে, গণিতে বা কম্পিউটারে খুবই দক্ষতা থাকে। অটিস্টিক শিশুকে ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে পরবর্তীতে সে অনেক গুণী হয়ে উঠতে পারে। এখন তারাও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখে।
সংবাদ সম্মেলনে নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ জানান, সমপ্রতি প্রকাশিত সমীক্ষা মতে প্রতি ৪৪ জনে ১ জন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু রয়েছে। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী প্রতি ৫৪ জন আমেরিকান শিশুর মধ্যে ১ জনের অটিজম আছে। গবেষণায় জানা গেছে যে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অটিজম হয়ে থাকে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি। আমেরিকায় ৩৪ জন ছেলের মধ্যে ১ জন এবং ২৫২ জন মেয়ের মধ্যে ১ জন অটিজম আক্রান্ত। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপে বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রায় ১৪ হাজার মতো অটিজম শিশু রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেটার চেয়ে ৪-৫ গুণ হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ জানান, সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শিশু মনোবিকাশকেন্দ্র চালুপূর্বক দ্রুত অটিজম শনাক্তকরণের ব্যবস্থা চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা আজ
পরবর্তী নিবন্ধবেতন-ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করলেন চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি