আল্লাহ পাক পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি হিসেবে আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে নির্দেশ করে সূরা বাকারায় বলেন, ‘ইন্নি জায়িলুন ফিল আরদে খলিফাতান’। এ মানবতাকে সঠিক পথ নির্দেশনা দিতে গিয়ে যুগে যুগে আল্লাহর বাণী সমৃদ্ধ কিতাবাদি ও আল্লাহর নূর (হেদায়ত) সমৃদ্ধ হাদী এলাল্লাহ গণকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। সূরা রাদে এরশাদ হয়েছে, ‘লি কুল্লি আযালিন কিতাব’। ‘লি কুল্লি কওমিন হাদী।’ যুগ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে প্রত্যেক জাতির জন্য অবতীর্ণ কিতাব ও হাদীগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশল (হেকমত) অবলম্বন করে মানবতার শান্তি ও মুক্তির মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করে গেছেন। এজন্যই আমাদের আল্লাহর সাথে সকল নবী রসূলগণ, আসমানী কিতাবসমূহ ও আল্লাহর নির্দেশনা পালনকারী ফেরেশতা–গণের প্রতি ঈমান আনতে গিয়ে বলতে হয়, ‘আমানতুবিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রাসূলিহি।’ এর ধারাবাহিকতায় আমরা খাতেমুন নবী (শেষ নবী) হিসেবে পেয়েছি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) কে। যার আগমনের শুভ সংবাদ রাব্বুল আলামিন দিয়েছেন ঈসা (আঃ)-এর মাধ্যমে, ইরশাদ হয়েছে, আমি ঈসা (আঃ) আমার পরে তোমাদের জন্য এক মহান রাসূলের (মুহাম্মদ দঃ) শুভ সংবাদ দিচ্ছি যার নাম হবে আহমদ। কুল কায়েনাতকে রাব্বুল আলামিনের দয়ায় সিক্ত করে শান্তির বার্তা প্রেরণের রূপকার মহানবীকে বলেছেন, আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি (সূরা আম্বিয়া ১০৭)। আল্লাহর বাণী, ‘তখাল্লাকু বে আখলাকিল্লাহ’, ‘সিবগাতাল্লাহা ওয়া মান আহসানা সিবগাতা’ অর্থাৎ আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও; নিজকে আল্লাহর রঙে রাঙ্গাও কারণ তার থেকে উত্তম কোন রঙ নেই। এ রঙে পূর্ণাঙ্গভাবে রঙিন হওয়া মহানবী (দঃ) মানবতার কর্মের সাক্ষী, শুভ সংবাদদাতা ও সতর্ককারী নূর হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা, ‘ইন্না আরসালনাকা শাহেদা ওয়া মুবাশ্বিরা ওয়া নাজিরাঁ ওয়া দাইয়ান ইলাল্লাহি বি ইজনিহি ওয়া সিরাজুম মুনীরা’ (সূরা আহযাব)। মহানবী (দঃ) কে আল্লাহ হেকমত, নবুয়ত ও রেসালতের মর্যাদা দান করেছেন, সূরা মায়েদা ৪৮নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আমি প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন শরীয়ত ও বিশেষ পন্থা (তরিকত) নির্ণয় করেছি। শৈশবে হাজরে আসওয়াদ পাথর প্রতিস্থাপনে (ইলমুল বেলায়তের মাধ্যমে) প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে ‘ইন্নাল ফিতনাতু আসান্দু মিনাল কাতল’ এ বাণীকে মাথায় রেখে আসন্ন ফিতনাকে প্রতিরোধ করেছেন। নবীজী পর্দা করার পর তাঁর বাণী ‘আনা মদিনাতুল ইলম ওয়া আলীউন বাবুহা’ অনুযায়ী বেলায়তের মালিক মওলা আলী শেরে খোদা। যুদ্ধে জয় যখন সমাগত তখন পবিত্র কুরআন বর্শাবিদ্ধ করে যখন সন্ধি প্রস্তাব দেয়া হল তিনি কিতাবুল্লাহ যা মুসলিম সমাজে একতার প্রতীক তার সম্মানে নিজের জয়কে প্রত্যাখান করে সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নৈরাজ্য বন্ধের জন্য সন্ধি করলেন। ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী ইয়াজিদ ও তার দোসরদের সাথে সন্ধি না করে ইমাম মাওলা হুসাইন সত্যিকার খেলাফত ও ন্যায়বিচার, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজ ও নিজ পরিবারের সদস্যবৃন্দের আত্মত্যাগের মাধ্যমে কারবালা প্রান্তরকে রঞ্জিত করে অন্যায়কে বাধা দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়েছেন।
হেরা পর্বতের গুহায় মোরাকাবা মোশাহেদার মাধ্যমে আল্লাহ দয়াল নবীকে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবানের জন্য কিতাব ও হিকমত (বিশেষ উপায়) দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে ‘উদউ ইলা সাবিলে রাব্বিকা বিল হিকমাও মওজি আতাল হাসানা’ অর্থাৎ মানুষকে আহবান করুন আল্লাহর দিকে বিশেষ উপায়ে ও সুন্দর কথার মাধ্যমে। তেমনি করে বাবা শাহজালাল, শাহ পরান, গাউছুল আজম বাবা ভান্ডারীসহ অনেক অলীকে দুর্গম পর্বতে, অরণ্যে মোরাকাবার মাধ্যমে মানবতাকে সহজে আল্লাহমুখী করার উপায় লাভ করতে দেখা যায়। গাউছুল আযম হযরত কেবলা (কঃ), গাউছুল আযম বাবাজান কেবলা (কঃ) হাজারো বির্ধমীকে আল্লাহ, তাঁর রসূল করিম ও উলিল আমর (অলীগণের) প্রতিবিশ্বাস আনয়ন করিয়ে তাদের আচার (ধর্মকে) পরিবর্তন করেন।
খাজা গরীবে নেওয়াজ, পৃথ্বিরাজের অনাচারের বিরুদ্ধে, বাবা শাহজালাল গৌর গোবিন্দের অনাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পরাজিত করে ক্ষমতা নিজেরা দখল করেননি, পরিচালক রাষ্ট্রপ্রধানদের স্রষ্টাপ্রদত্ত নৈতিকতার বাণীশিক্ষা দিয়ে সমাজে ন্যায়নীতি সুবিচার সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ইন্নাল হাসানাতি ইউজহিবুন্ নাস সাইয়্যাই। আল্লাহওয়ালাগণ তাদের জন্য ভক্ত অনুরক্তদের আনীত হাদীয়া অকাতরে মানবের তরে দান করে, আল্লাহর নির্দেশ ‘আসসাদকাতু যুতফাউল বালা’ অর্থাৎ দানের মাধ্যম মুসীবত দূর হয় এ বাণী বাস্তবায়ন করেন। তাদের অনুকরণে আজকে মাইজভান্ডার দরবার শরীফ সহ বিভিন্ন অলীর দরবারে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানুষকে স্বনির্ভর করার জন্য, মানবতার সেবামূলকথাতে দান করে এবং আশেকানে আউলিয়াগণকে যাকাতসহ, নফল দান সদকার মাধ্যমে যাতে সমাজের শোষিত, দারিদ্র নিপীড়িত, জনবলকে সবল করে সুখী শৃঙ্খল, সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে সেভাবে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। বেলায়তের মালিক অলিগণের অনুসরণ সে সর্বোপরি সূরা ফাতিহার বাণী। সিরাতুল মোস্তাকিম (সরল, সত্য পথ) এবং সেই পথ সিরাতাল্লাজিনা আন আ’মতা আলায়হিম (যারা আপনার পথে প্রিয় অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়েছে) তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। মালিক আমাদেরকে আল্লাহর অনুগত্য, নবী পাকের অনুগত্য ও উনির আমার অলীগণের অনুগত্যের মাধ্যমে নিশ্চয়ই মহান সফলতা দান করবেন। (আমিন)












