উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাতের মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব। দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অর্থ আত্মসাতের এ মামলায় কলিমউল্লাহর সঙ্গে আসামি করা হয়েছে আরও চারজনকে। তারা হলেন– বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রকল্প পরিচালক এ কে এম নূর–উন–নবী, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার মো. আ. সালাম বাচ্চু এবং এম এম হাবিবুর রহমান। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অর্থ আত্মসাতের এ মামলায় এদিন পাঁচ আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও আসে একই আদালত থেকে।
‘দীপু মনি অপবাদ ছড়িয়েছেন’ : আওয়ামী লীগ শাসনামলে তখনকার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি অন্যায় আবদার করতেন বলে আদালতে দাবি করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। তার ভাষ্য, প্রতিবাদ করায় অপবাদও ছড়িয়েছেন দীপু মনি।
আদালতে শুনানিকালে বিচারক কলিমউল্লাহকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কোন সালে ভিসি হয়েছেন?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘তৎকালীন সরকার আমাকে ২০১৭ সালে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়।’ তখন বিচারক বলেন, ‘আপনি তো ফুলটাইম ঢাকায় থাকতেন। আপনি ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিন ঢাকায় থেকেছেন?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘দীপু মনি অন্যায় আবদার করতেন। এটা মেনে না নেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়েছেন। আমি ১৭–১৮ ঘণ্টা কাজ করেছি। তার বিরুদ্ধে আমি প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছিলাম। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দীপু মনি এগুলো ছড়িয়েছেন।’
বিচারক জানতে চান, ‘চার বছরে উন্নয়ন খাতে কোনো টাকা পেয়েছেন?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার আগের ভিসি নুর নবীর সময় ৯৯ কোটি টাকার কাজ চলমান ছিল। আমি দায়িত্ব নিয়ে কাজ চলমান রেখেছি।’ দুদকের আইনজীবী দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, ‘তিনি ঢাকায় থাকতেন। টকশো করতেন নিয়মিত। তিনি কীভাবে ১৭–১৮ ঘণ্টা কাজ করেন?’ এ সময় কলিমউল্লাহ বলেন, ‘আমি রাতের বেলা টকশো করতাম।’
তখন বিচারক জানতে চান, তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা আছে কি না? দুদক জানায়, অন্য কোনো মামলা নেই। এ সময় বিচারক আসামির উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে, সেটা তদন্ত হলে পুরোটা বেরিয়ে আসবে।’
এক পর্যায়ে কলিমউল্লাহ বলেন, ‘দুদক থেকে আমি কোনো চিঠিপত্র পাইনি। আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকা হয়নি। সকালে বাসা থেকে পুলিশ নিয়ে আসছে। এক পোশাকে একাই চলে এসেছি। আপত্তি করিনি।’
বিচারক বলেন, ‘আপনি আপত্তি করবেন কেন? আপনার তো জেলে যেতে হবে। কবরেও একা যেতে হবে, জেলখানায়ও একা যেতে হবে। সাথে কেউ যাবে না। দুর্নীতি যারা করছেন, তারা জেলে পচছেন। আর দুর্নীতির টাকায় (আত্মীয়রা) অনেকে বিদেশ ভ্রমণ করছেন।’
এরপর কলিমউল্লাহ বলেন, ‘মাননীয় আদালত, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি। আমি কমিশন্ড অফিসার, গ্রেড–১ পারসন।’ বিচারক বলেন, ‘আপাতত আপনাকে জেলে যেতে হচ্ছে।’
পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।