বেপারি হতাশ, ক্রেতা ফিরছেন হাসিমুখে

বাজারে প্রচুর গরু ।। দামও কম ।। আজ বেচাকেনার শেষ দিন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২০ জুলাই, ২০২১ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

বিক্রির জন্য কুষ্টিয়া থেকে ১৫টি গরু নিয়ে বিবিরহাট বাজারে এসেছেন রহিম বেপারি। বুধবার সকালে আসলেও গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র দুইটি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি জানান, কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করেন নি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন তাতে খরচও উসুল হবে না।
আজাদীর সঙ্গে কথা বলার ফাঁকেই এক লাখ ২০ হাজার টাকায় একটা গরু বিক্রি করলেন তিনি। অথচ একই গরু আগের দিন রোববার এক ক্রেতা এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা বললেও বিক্রি করেন নি। একদিনের ব্যবধানে ১৫ হাজার টাকা ছাড় দেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বললেন, ‘বাজারে ক্রেতা কম। বেশি লাভের আশায় বসে থাকলে বিক্রি না করেই ফেরত যেতে হবে। তাই অল্প লাভে বিক্রি করে দিলাম’। শেষ মুহূর্তে এসে বিবিরহাট বাজারের মত একই চিত্রই বিরাজ করেছে নগরের অন্যান্য পশুর হাটগুলোতেও। অর্থাৎ শেষ দিকে এসে বাজারে কোরবানি পশুর দাম ছিল পড়তির দিকে। গতকাল সোমবার তিনটি পশুর হাটে সরেজমিন ঘুরে এবং বাকি হাটগুলোর একাধিক ক্রেতা-বিক্রেতা ও ইজারাদারের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। নগরে এবার সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় অনুমোদিত পশুর হাট বসেছে ছয়টি। হাটগুলো হচ্ছে- সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট, কর্ণফুলী গরু বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার এবং ৪১নং ওয়ার্ডস্থ বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। এগুলোর বাইরে শহরের পাশেই মইজ্জ্যার টেক বাজারও ছিল জমজমাট।
কোরবানি পশুর হাটগুলোতে বিক্রি শুরু হয়েছে গত ১২ জুলাই। আগামীকাল বুধবার পবিত্র ঈদুল আজহা। অর্থাৎ আজ পশুর হাটের শেষদিন। সাধারণত নগরের বেশিরভাগ কোরবানিদাতাই রাখার সুবিধার্থে গরু কিনেন কোরবানির শেষ দুইদিন আগে। ওই হিসেবে গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার বাজার থাকার কথা জমজমাট। যদিও গতকালও আগের দিনগুলোর চেয়ে বাজারে ভিড় ছিল কম। আজও এমন হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইজারাদাররা। তাদের ভাষায়, শেষ দুইদিনের প্রথম দিন (গতকাল) পর্যাপ্ত গরু থাকলেও ক্রেতা সংকট ছিল। ক্রেতা কম থাকায় গরুর দামও কমতির দিকে। এরপরও হয়নি প্রত্যাশিত বেচাকেনা। এতে তারা হতাশ। ইজারাদারের পাশাপাশি হতাশার কথা জানিয়েছেন বিক্রেতারাও। তবে খুশি ক্রেতারা, কমদামে গরু কিনতে পেরে হাসিমুখে ফিরছেন তারা।
গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লাহ, নাটোরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে গরু এনেছেন বেপারিরা। আছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী থেকে নিয়ে আসা গরুও। স্থানীয় বিভিন্ন খামারে হৃষ্টপুষ্টকৃত প্রচুর গরুও আনা হয়েছে বিক্রির জন্য। এসব বিক্রেতাদের বেশিরভাগই হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে সাগরিকা বাজারে দুপুরে ক্রেতার উপস্থিতি দেখা গেছে একেবারে কম। ভিড় নেই বললেই চলে। বাজারটিতে সাইফ নামে এক বিক্রেতা বলেন, চার বন্ধু মিলে কোরবান উপলক্ষে ২৫টি গরু সংগ্রহ করেছিলাম ফরিদপুর থেকে। মাত্র সাতটি বিক্রি হয়েছে। তাও অনেকটা কেনা দামে। বাকি গরুগুলো নিয়ে চিন্তায় আছি। যেহেতু নিজস্ব কোনো খামার নেই তাই অবিক্রিত গরুগুলো কি করবো। শেষ দিকে এসে গরুর দাম কমে গেছে বলেও জানান তিনি।
বিকেলে কর্ণফুলী গরু বাজারেও আগের দিনের ভিড় দেখা যায়নি। তবে বাজার থেকে যারা ফিরছেন তাদের বেশিরভাগের হাতে ছিল গরু। ইসমাইল নামে এক কোরবানিদাতা বলেন, ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে একট গরু কিনলাম। আগেরদিন ৮০ হাজার টাকা বললেও বিক্রি করতে চায়নি। আজ পাঁচ হাজার টাকা কম দামে দিয়ে দিল। একই বাজারে এক লাখ ২৭ হাজার টাকায় গরু কিনে বাড়ি ফেরা আকরাম বলেন, ‘আজ গরুর দাম পানির মতো হয়ে গেছে। যে গরু কিনলাম তা গত কয়েকদিনের বাজার দর অনুযায়ী দেড় লাখ টাকার বেশি হবে।’
জলিল মিয়া নামের এক বেপারি বলেন, ‘নামমাত্র লাভে বিক্রি করে দিচ্ছি। আবার একটিতে লাভ হলে আরেকটি লাভ না করেই দিয়ে দিচ্ছি। যে কোনোভাবে গরুগুলো বিক্রি করতে পারলেই বাঁচি। রেখে দিলে পরে আরো ক্ষতি হবে।’
সন্ধ্যায় বিবিরহাট বাজারে দেখা গেছে, প্রচুর গরু। ক্রেতা কম। করিম নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘কথায় আছে কেউ গরু কিনে, কেউ দড়ি। শেষ দিকে এসে মনে হচ্ছে গরুই কিনেছি। এভাবে দাম কমে যাবে কল্পনাই করিনি। মনে হচ্ছে জিতেছি। ’
বিবিরহাট বাজারের ইজারাদার মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, গরুর অভাব নাই। কিন্তু ক্রেতা কম। সন্ধ্যার পর থেকে দাম কমছে। একদিন আগে যেটার দাম ছিল এক লাখ টাকা সেটা আজকে (গতকাল) বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার টাকায়।
মইজ্জ্যারটেক বাজারের ইজারারদার সাইফুল হুদা জাহাঙ্গীর আজাদীকে বলেন, ক্রেতা সংকট। মন্ত্রণালয়সহ পত্র-পত্রিকায় মানুষকে বাজারে যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তার কারণেই এ অবস্থা। শেষ মুহূর্তে দাম কেমন জানতে চাইলে বলেন, এক লাখ টাকার গরু ৮০ -৮৫ হাজার টাকায় চলে এসেছে। বাটারফ্লাই পার্ক সংলগ্ন বাজারের ইজারাদার মো. ওয়াহিদ বলেন, গত কয়েকদিন ভালো ছিল। আজকে (গতকাল) ক্রেতা কম। দামও কমে গেছে। ৯০ হাজার টাকার গরু ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচামড়া, খাদ্য ও ওষুধ খাত আওতার বাইরে
পরবর্তী নিবন্ধশ্বশুরবাড়ি থেকে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর লাশ উদ্ধার