বেপরোয়া ব্যাটারি রিক্সা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৭ মে, ২০২১ at ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মাহবুব জামান গত সোমবার সকাল পৌনে দশটার দিকে দেওয়ানবাজার থেকে কর্মস্থল জুবিলী রোড যাচ্ছিলেন ব্যাটারি চালিত রিক্সায় চড়ে। বিদ্যুৎ গতিতে ছুটতে থাকে রিক্সা, প্যাডেল মারার প্রয়োজন পড়ছে না, রিক্সা চালক শিস দিতে দিতে ছুটছে, যেন পঙ্খী রাজ ঘোড়া। সাধারণ রিক্সাগুলোকে পাশ কাটাতে কাটাতে তার উল্লাস দেখে কে? মাহবুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। রিক্সা চালককে অনুরোধ করেও লাভ হয় নি। যা হওয়ার তা-ই হলো। চেরাগী পাহাড়ের মোড়ে এসে বাঁক ঘুরতে গিয়ে রিক্সা উল্টে গেল। তিনি হাতে ব্যথা পেলেন। রিক্সাওয়ালাকে কিছু বলার আগেই সে আরো গরম, ব্যাটারিচালিত রিক্সায় বসার নিয়মই নাকি তিনি জানেন না ইত্যাদি। এটিই একমাত্র নয়, ব্যাটারিচালিত রিক্সার গতি নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা, চালকদের অনভিজ্ঞতা এবং ওভারটেক প্রবণতার কারণে ব্যাটারি চালিত রিক্সায় দুর্ঘটনা ঘটছে যত্রতত্র। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অস্থির নগরবাসী। দিন নেই রাত নেই, যখন তখন লোডশেডিং কেড়ে নিচ্ছে কর্ম চাঞ্চল্য। বিদ্যুৎ যতোটুকু জুটছে, অবৈধ বিদুৎ সংযোগ তার একটি বড় অংশ কেড়ে নিচ্ছে। মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো অনুমোদনহীনভাবে নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিক্সা। দিনকে দিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। লকডাউনে অন্য যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ির সুযোগে ব্যাটারি রিক্সা আরো বেপরোয়া! সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের কড়া নির্দেশনার পরও নগরীর অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চলাচল নিষিদ্ধ ব্যাটারি চালিত রিক্সা।
সরেজমিন গতকাল দেখা যায়, নগরীর জামালখান, চেরাগী পাহাড়, আন্দরকিল্লা, জেল রোড, পাথরঘাটা, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, চাক্তাই, আসকার দীঘির পাড়, চকবাজার ডিসি রোড, বাদশা চেয়ারম্যান ঘাটা, বাকলিয়া সৈয়দ শাহ রোড, আবদুল লতিফ হাট, বহদ্দারহাট খাজা রোড, খতিবের হাট, মুরাদপুর-অক্সিজেন রোড, বায়েজিদ বোস্তামী রোড, চান্দগাঁও সিএন্ডবি এলাকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা চলছে। প্রতিটি সড়কে গড়ে দশটি রিক্সার মধ্যে অন্ত:ত তিনটি রিক্সা ব্যাটারি চালিত। নির্দিষ্ট কোন গন্ডি নেই, চলছে নিজেদের ইচ্ছেমতো।
অনভিজ্ঞ এসব রিকশা চালকের বেশিরভাগেরই দ্রুতগতি সম্পন্ন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ নেই। হতদরিদ্র মানুষগুলোর বেশীরভাগই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কাজের সন্ধানে নগরীতে এসেই সহজ পেশা হিসেবে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নেমে যাচ্ছে। প্যাডেল রিকশা চালানো কষ্টসাধ্য বলেই তারা দ্রুতগতির ব্যাটারিচালিত রিকশার দিকেই বেশী ঝুঁকছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের আয়ের উৎস হিসেবে এ সকল রিক্সা চলতে দেয়া হলেও বর্তমানে তা ব্যবহার করছে সকলে। এ যান চালানো সহজ হওয়ায় অনেক সুস্থ মানুষ প্যাডেল চালিত রিক্সা ছেড়ে বেছে নিচ্ছে এ ব্যাটারি চালিত রিক্সা। অনেক যাত্রী সময় বাঁচাতে বা সাশ্রয়ী হওয়ায় ব্যাটারি রিক্সা ব্যবহারে আগ্রহী হয়, আবার অনেকে এ ধরণের রিক্সার বেপরোয়া গতি দেখে অনিচ্ছাও প্রকাশ করে।
তথ্য মতে, নগরীতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। বৈদ্যুতিক মোটরচালিত এসব রিকশার প্রতিটির ব্যাটারি চার্জ দিতে দৈনিক খরচ হয় ৮ দশমিক ৭৫ ইউনিট। সে হিসেবে প্রতিদিন খরচ হয় ৮৭ হাজার ৫০০ ইউনিট বিদ্যুৎ। প্রতিদিন ৭০ টাকার বৈদ্যুতিক চার্জ দিতে হয় ব্যাটারিচালিত প্রতি রিকশায়। বিভিন্নস্থানে রিক্সার ব্যাটারি চার্জ করা হচ্ছে বিদ্যুতের চোরাই সংযোগ নিয়ে। যার কারণে নগরীতে বাড়ছে লোডশেডিং।
গতকাল আন্দরকিল্লা থেকে বহদ্দারহাট যাওয়ার পথে ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালক সুমন এ রিক্সার অনুমোদন না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, অনুমোদন না থাকলেও আমরা সড়কে গাড়ি চালাচ্ছি। এজন্য মালিককে দৈনিক দিতে হয় তিনশ টাকা। এছাড়া ব্যাটারি চার্জ দিতে খরচ হয় ৬০ টাকা। চার ঘন্টা চার্জ দিলে আট ঘন্টা চালানো যায়। ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালকদের দেয়া তথ্য মতে , সিরাজদ্দৌলা রোড থেকে বাকলিয়া পর্যন্ত এলাকায় ২০/২৫ টি ব্যাটারি চার্জের গ্যারেজ খোলা হয়েছে। এর কোনটি বস্তির মধ্যে, কোনটি রাস্তার পাশের কোন দোকানের পেছনে। একইভাবে হালিশহর, ছোটপোল, পাহাড়তলী আমবাগান, কর্নেলহাট এলাকায় এসব গাড়ির মালিকদের অনেকে ঘরের সংযোগ থেকে নিজের একাধিক গাড়ি চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন বলেও জানিয়েছেন চালকরা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ইন্সেপেক্টর (ট্রাফিক উত্তর) মশিউর রহমান আজাদীকে বলেন, ব্যাটারি রিক্সা চলাচল অনেক আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের জন্য তারা মূল সড়কে সচরাচর চলাচল করতে পারে না। তবে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় এসব রিকশা চলছে। তিনি আরও জানান, ট্রাফিক পুলিশের হাতে ধরা পড়লে ট্রাফিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সিএমপির ইন্সপেক্টর (ট্রাফিক দক্ষিণ) মহিউদ্দিন খান আজাদীকে বলেন, আমাদের ডাম্পিং চেক করলেই বুঝবেন কতো হাজার ব্যাটারি আর ব্যাটারি চালিত রিক্সা আটক আছে। তবু ফাঁকি দিয়ে যে চলছে না তা বলছি না। কিন্তু সার্জেন্টের চোখে পড়লেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক অন্যরকম চাঁদ দেখলো পৃথিবীবাসী
পরবর্তী নিবন্ধমহসিন কলেজ ছাত্র খুন