বেপরোয়া গাড়ি চালানোর দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে

| মঙ্গলবার , ২২ মার্চ, ২০২২ at ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ার আধুনগরে প্রাইভেটকার ও ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে সোমবার প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ছাত্রসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ইউনিয়নের আধুনগর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাইওয়ে পুলিশ জানায়, কক্সবাজারমুখী প্রাইভেটকারের সাথে বিপরীতমুখী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে ৪ জন নিহত হয়। আহত অবস্থায় হুমায়ুনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশংকজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের গণপরিবহন ব্যবস্থাকে গুছিয়ে একটি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য ২০০৫ সালে একটি পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মনোযোগের অভাবে সেই পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। তাঁরা বলেন, সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, যাদের কাছে সেই কৌশলপত্র পাঠানো হয়েছিল, তাদের নজরদারির অভাবের কারণে সেটি হয়নি। পাশাপাশি আমাদের দাতাগোষ্ঠীগুলোও মেগা প্রজেক্টের মধ্যে চলে আসছে। ফলে পথচারীবান্ধব ও গণপরিবহনকে সুশৃঙ্খল করে সেবা খাতে পরিণত করা যায়নি। এখনকার আলাদা আলাদা মালিক নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল এবং সেটি নিয়ন্ত্রণের অসাধ্য বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।
এখানে উল্লেখ্য, সড়ক পরিবহন আইনে বর্তমানে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ৪ মাসের কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এই শাস্তি কম বলে তা আরও কঠোর করার দাবি রয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন আরও কঠোর করার উদ্যোগ থাকলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরোধিতায় তা এখনও ঝুলে আছে।
গণপরিবহন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই সরকার ও বিশ্লেষক নানা মহলেই আলাপ আলোচনা চলছে। কিন্তু কোনো পরিবর্তনই আসেনি। অনেকের প্রশ্ন, কেন কোনো একটি কাঠামোয় আনা যাচ্ছে না গণপরিবহন ব্যবস্থাকে? বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছে, বেশ কয়েকটি ঘটনা আলোচিত হবার পর সংশ্লিষ্ট চালককে গ্রেপ্তার ও মামলার মত তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দৃশ্যত বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ বিষয়ে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মনোযোগের অভাবে সেই পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, যাদের কাছে সেই কৌশলপত্র পাঠানো হয়েছিল, তাদের নজরদারির অভাবের কারণে সেটি হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল সমস্যা পরিচালনায়। সে কারণে কৌশলপত্রে সুপারিশ করা হয়েছিল সব গণপরিবহনকে এক ছাতার নিচে কয়েকটি কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসার। কিন্তু সেটা হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এত বছর আগে একটি কৌশলপত্র সরকার অনুমোদন করলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা যায়নি কেন।
দুর্ঘটনার নামে মানুষ হত্যা, ফুটপাতের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীর ওপর বাস তুলে দেওয়া-এগুলো দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড। সুতরাং এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমরা এটাও জানি, সরকার বেপরোয়া গাড়ি চালানোর বিপক্ষে। তাই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে সরকারকেই।
পরিবহন ব্যবস্থার ওপর মানুষের মনে চরম অনাস্থা তৈরি হয়েছে। নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আজ মানুষ ঐক্যবদ্ধ। তাঁরা মাঠে নেমেছেন, মানববন্ধন করছেন, প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীও ইতোপূর্বে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা চাইবো, সড়কে এই চলমান নৈরাজ্য বন্ধ হোক। তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে