টানা দ্বিতীয়বার সাফ জয় করে গত বৃহষ্পতিবার দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। নেপালকে ২–১ গোলে হারিয়ে আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেওয়ায় ছাদখোলা বাসে বিরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাদের। প্রিয় ফুটবলারদের কাছ থেকে দেখতে বাফুফে ভবনে অপেক্ষায় ছিলেন বেশ কিছু সমর্থক। এতেই প্রমাণ মেলে দেশের মানুষের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা কতটা। টানা দ্বিতীয়বারের মত অধিনায়ক হিসেবে সাফ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন সাবিনা খাতুন। অথচ কত সীমাবদ্ধতার মাঝেই তাদের এই টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুত হতে হয়েছে। তারপরও শিরোপা জয়ের পর আনন্দের যেন শেষ নেই সাবিনাদের। সাফ জয়ের আগে থেকেই মেয়েদের বেতন অনিয়মিত হওয়ার কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। সেসব নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ করেছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। যেখানে বেতন বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তিনি।
সাবিনা বলেন দুপুরে আমরা অনেক রকম ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছি। আমরা অনেকদিন দেশের বাইরে ছিলাম। তাদের আজকে চাওয়া ছিল ভর্তা দিয়ে খাবে। তাই আজ আমরা ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছি। প্রায় ১২–১৪ রকমের ভর্তা ছিল। অনেকগুলোর নাম আমার মনে নেই। টানা দ্বিতীয়বারের মত সাফ জয়ের কৃতিত্ব দেশের মানুষদের। দেশের মানুষের জন্যই এই অর্জন। সব মেয়েরা দেশের মানুষের জন্য খেলে। শুধু আমরা না সব ইভেন্টের খেলোয়াড়রাই দেশের জন্য খেলে। জয় যখন আসে, দেশের মানুষদের কথাই সবার আগে মাথায় আসে। এই শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আমি মেয়েদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমি তাদের খুব ভালোভাবেই চিনি। তাদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে আমি জানি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর পরিস্থিতি আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গিয়েছিল। ম্যাচটা ড্র হওয়ার পরে আমাদের সামনে এমন সমীকরণ দাঁড়িয়েছিল আমাদের গোল কম হজম করতে হবে। যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে চাই তাহলে আমাদের জিততে হবে। সবার মাথায় সেটা ছিল। সবাই অনুপ্রাণিত ছিল। পাশাপাশি চেষ্টা করেছি দলটাকে চাঙ্গা রাখার। মেয়েরা সাফ জিতে দেশে ফিরলেও বাফুফের নব নির্বাচিত সভাপতি দেশের বাইরে। এএফসির এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি এখন কোরিয়ায়। তাই সাবিনাদের সাথে বাফুফে সভাপতির দেখা হয়নি। সাবিনা বলেন এখনো বাফুফের বর্তমান সভাপতি তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি। দেশের বাইরে আছেন তিনি। তবে আমি উনার অনেক সাক্ষাৎকার দেখেছি, যেখানে উনি মেয়েদের ফুটবলের উন্নতির কথা বলেছেন। মেয়েদের ফুটবল নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করার কথা বলেছেন। আমি আশা করছি আমাদের আর্থিক বিষয়গুলোর পাশাপশি উনি আমাদের বাকি সব চাহিদাও পূরণ করবেন। গত বৃহষ্পতিবার দেশে ফেরার পর বাফুফে ভবনে ক্রীড়া উপদেষ্টা সংবর্ধনা দিয়েছে নারী ফুটবলারদের। সেখানে উপদেষ্টার কাছে আসলে তেমন কোন চাহিদা কিছু ছিল না বলে জানান সাবিনা। উনি মেয়েদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলেছেন এমন সাফল্য যেন বারবার আসে। তিনি বলেছেন নারী ফুবল দল এবং নারী ক্রিকেট দলের সুযোগ সুবিধা যেন বাড়ানো যায় এই লক্ষ্যে তিনি দুই কর্তৃপক্ষের সঙ্গেই কথা বলবেন।এমন সাফল্যের পর চাওয়া–পাওয়া তো অবশ্যই আছে। বাফুফে সভাপতির কাছে কি চাওয়ার আছে তেমন প্রশ্নের জবাবে সাবিনা খাতুন বলেন আমরা চাইব বেতনটা যেন বাড়ানো হয়। বেতনটা যেন নিয়মিত হয়। এছাড়া আমাদের নারী লিগ যেন নিয়মিত হয় এবং আরও লম্বা সময় ধরে হয়। মাঠে যেন খেলাটা থাকে। এছাড়া আরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ যেন খেলতে পারি। এই সাফের পর আমি চাই আমরা যেন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেই পরে না থাকি। আমরা যেন পুরো এশিয়ার মধ্যে নিজেদের মেলে ধরতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টা আজ সংবর্ধনা দেবেন নারী ফুটবলারদের। সেখানে কি চাইবেন জানতে চাইলে সাবিনা বলেণ আমাদের মেয়েরা খুবই নিম্মবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে। কিছুদিন আগে যে বন্যা হয়েছে সেখানে কয়েকজনের পরিবারের বাসায় পানি উঠে গেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আমাদের পরিবারের মানুষরা যখন বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন তখন সত্যি বলতে তাদের থাকার কোনো জায়গা থাকে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করব, তিনি যেন মেয়েদেরকে কোনো বাসা বা ফ্ল্যাট দিতে পারেন। আর সেটাই মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার হবে।