রাউজানের কদলপুর গ্রামের মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন চৌধুরীর (৫০) সঙ্গে রাউজান পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের ঢেউয়াপাড়া দাশপাড়া গ্রামের ইমন দাশগুপ্তের (৩৫) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মাঈনুদ্দিন গণপূর্ত বিভাগে ঠিকাদারির কাজ করতেন। ইমন ছিলেন চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ–১ এর উপসহকারী প্রকৌশলী। তারা ভারতের আজমির শরীফ জেয়ারত ও ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীরে বেড়ানোর জন্য গিয়েছিলেন গত ৩ নভেম্বর। দুজনের সঙ্গে ছিলেন গণপূর্ত বিভাগ রাঙামাটি জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশল। দু–এক দিনের মধ্যে তিনজনের একসঙ্গে দেশে ফেরার কথা ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, দেশে ফেরা হলো না। গত ১১ নভেম্বর কাশ্মীরের শ্রীনগরের ডাল লেকে হাউজবোটে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান তিনজনই।
লাশ দেশে আনা নিয়ে চিন্তা : দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া মাঈনুদ্দিনের কদলপুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকাহত বাবা মোজাফ্ফর হোসেন চৌধুরী ঘরের বারান্দায় চুপচাপ বসে আছেন। বাড়ির ভেতরে মা ও আত্মীয়– স্বজনের আহাজারিতে আকাশ–বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে আসা ভগ্নিপতি কামাল উদ্দিন বলেন, মাঈনুদ্দিনরা দুই বোন, এক ভাই। তিনি নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। ১৫ বছর বয়সী মেয়ে আয়শা নবম শ্রেণিতে ও ১০ বছরের ছেলে চেরাজুম মুনতাছির নগরের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
কামাল জানান, শনিবার রাতে সংবাদ পেয়ে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়। ভারত থেকে লাশ কীভাবে আনবেন, এ নিয়ে তারা এখন উদ্বিগ্ন। সমস্যা হয়েছে সেই দেশ থেকে লাশ আনতে হলে ডিএনএ টেস্ট করতে হবে। এই পরীক্ষা দিতে হবে মা–বাবাকে। এখন সমস্যা হচ্ছে তাদের কারোর পাসপোর্ট নেই। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা এই নিয়ে সমাধান পেতে রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীরর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান তিনি।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঈনুদ্দিন বিনয়ী স্বভাবের। তিনি সামাজিক কাজেও যুক্ত ছিলেন।
ভিসার জন্য ইমন দাশের মায়ের অপেক্ষা : ছেলের লাশ গ্রহণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা দিতে হবে প্রকৌশলী ইমন দাশের মা স্মৃতিরাণী দাশগুপ্তকে। শনিবার রাতে কাশ্মীরে দুর্ঘটনায় ছেলের মারা যাওয়ার সংবাদ তাকে দিয়েছিলেন ইমনের ভগ্নিপতি বিমল চন্দ্র দে।
ইমন একমাত্র পুত্র আহির দাশ ও স্ত্রীকে নিয়ে নগরের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে থাকতেন। মা স্মৃতি দাশ থাকতেন রাউজানের দাশ পাড়ায়। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ইমনের বাড়ি তালাবদ্ধ। কথা হয় বাড়িতে বসবাস করা জেঠাতো ভাই প্রসেনজিৎ দাশগুপ্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, ইমনের মৃত্যুর সংবাদে বাড়ির সকলেই শোকে স্তব্ধ। প্রতিবেশীরা জানান, স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে ইমন সম্প্রতি গ্রামে এসেছিলেন।
মোবাইলে কথা হয় ইমনের ভগ্নিপতি বিমল কান্তি দে’র সঙ্গে। তিনি জানান, শনিবার রাতে ইমনের মাকে শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি ভারতে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করেছেন। সেখানে লাশ গ্রহণের জন্য ডিএনএ টেস্ট দিতে হবে। ভিসা হলে বিলম্ব না করে তিনি রওনা দেবেন। তিনি জানান, ইমনের একমাত্র বোন দোলা দাশগুপ্ত থাকেন প্রবাসে।












