বেগম রোকেয়া : নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ

| শুক্রবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বেগম রোকেয়া। বাংলার নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। ঊনিশ শতকে এ দেশের পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের বঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। সদা ব্যাপৃত থেকেছেন নারী শিক্ষার বিস্তার এবং সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায়। শিক্ষাবিদ ও লেখক হিসেবেও তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠিত। রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে এক ক্ষয়িষ্ণু বনেদি সামন্ত পরিবারে।

তার বাবা আবু আলী হায়দার সাবের বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হলেও মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন রক্ষণশীল। বড় দুই ভাই-বোনের সহযোগিতায় তিনি গোপনে শিক্ষালাভ ও সাহিত্যচর্চা করেন। ১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরের সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন একজন উদার মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি। স্বামীর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কারণেই তার জ্ঞানচর্চার পরিধি বিস্তৃত হয়।

ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের লেখকদের রচনার সাথে পরিচিতি ঘটতে থাকে। দেশের সাধারণ মানুষ, স্বদেশ আর মাতৃভাষার প্রতি ছিল তাঁর অকুণ্ঠ ভালোবাসা। পরাধীন ভারতবর্ষের অবমাননা ও দীনতা দূর করার উপায় সম্পর্কে তিনি বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী মতামত ব্যক্ত করেছেন। ১৯০২ সালে ‘পিপাসা’ নামক একটি গদ্য রচনার মাধ্যমে তিনি সাহিত্যজীবন শুরু করেন।। ১৯৫০ সালে মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনা ‘সুলতানাস ড্রিম’ যার অনূদিত রূপ ‘সুলতানার স্বপ্ন’ প্রকাশের মাধ্যমে সর্বজন পরিচিত হয়ে ওঠেন। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়।

তার অন্যান্য গ্রন্থ হলো- পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর। প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্যদিয়ে তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আর লিঙ্গসমতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। হাস্যরস আর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাহায্যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অসম অবস্থান ফুটিয়ে তোলেন। তাঁর অধিকাংশ রচনাই সমাজ সমালোচনামূলক যুক্তিবাদী এবং অসামপ্রদায়িক মানসিকতার পরিচয়বাহী। এইসব রচনার মাধ্যমে নারীমুক্তি আন্দোলনেও তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

নারী শিক্ষার বিস্তার ও নারী মুক্তির লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল’। তিনিই প্রথম মুসলিম নারী যিনি দেশ ও জাতির কল্যাণ দেখেছেন নারী-পুরুষের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার ভেতর। আর সমাজের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ, অক্লান্ত কর্মী। যুগে যুগে তিনি প্রেরণার উৎস হয়ে আছেন। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধঅনলাইন জুয়া প্রতিরোধে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে