জীবন অমূল্য। প্রতিটি প্রাণই অপার সম্ভাবনাময়। অথচ প্রতিনিয়ত ঘটছে আত্নহননের ঘটনা। জীবনের একি নিদারুণ পরিসমাপ্তি! হতাশা, দারিদ্রতা, বেকারত্ব, পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, অভিমান, বিবাদ, সর্ম্পকের অবনতি, প্রিয় মানুষের বিয়োগব্যথা ছাড়াও নানা কারণে আত্নঘাতী হচ্ছে মানুষ। অনেক সময় অতি তুচ্ছ কারণেও ঘটে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। করোনাকালীন সময়ে নানামুখি সংকট আর তীব্র মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবনে দুঃখ-কষ্ট, বাধা-বিপত্তি থাকবেই। পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক ভেঙে পড়া চলবে না। প্রতিকূলতাকে জয় করে ঘুরে দাঁড়ানোর নামই জীবন। সবকিছুকে সহজভাবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। সকল শঙ্কাকে উপেক্ষা করে পথ চলা শিখতে হবে। আত্মহত্যার অন্যতম কারণ মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে যাওয়া। সবাই নাম-যশ, অর্থ-প্রতিপত্তির পেছনে ছুটছে। মানুষের চাওয়ার কোনো শেষ থাকে না। যখন প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ফারাক দেখা দিচ্ছে তখন মানুষ হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই আত্নঘাতী হচ্ছে। আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন দরকার। শিক্ষার্থীদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে, ভালো রেজাল্ট বা এ প্লাজ না পেলে জীবন বৃথা। সমাজের নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা পরিহার করে সুস্থ ও ইতিবাচক চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। অনেক সময় একাকীত্ব বা অবহেলা আত্নহত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারে পিতামাতা ও সন্তানদের উচিত পরস্পরকে সময় দেয়া, একে অন্যকে বুঝার চেষ্টা করা। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন মজবুত হলে মানুষ বিপদে ভরসা পায়। ফলে আত্মহত্যা করার প্রবণতা হ্রাস পায়। কেউ আত্মহত্যা করলে মানুষ হয়তো দু-একদিন কাঁদে বা আফসোস করে। পরে ঠিকই ভুলে যায়। বিপরীতে যে লোক বাঁধাকে অতিক্রম করে ঘুরে দাঁড়ায়, মানুষ তাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখে, অনুসরণ করে। সকল ধর্ম মতে, আত্মহত্যা মহাপাপ। সকল পরিস্থিতিতে জীবনকে ভালোবাসতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, জীবন কিন্তু একটাই। লেখক: শিক্ষক, প্রাবন্ধিক।